আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজকে কত লোক। লোকে লোকারণ্য। পথে পথে মানুষ আর মানুষ। কত যে মানুষ। এটা হয়ে গেছে মহাসমুদ্র। জনতার মহাসমুদ্রের গর্জনধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। বিএনপির নেতাদের বলব ঘরে বসে সিরিয়াল দেখ, আন্দোলনে লাভ হবে না।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে কত লোক। লোকে লোকারণ্য। পথে পথে মানুষ আর মানুষ। কত যে মানুষ। এটা হয়ে গেছে মহাসমুদ্র। জনতার মহাসমুদ্রের গর্জনধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকার চায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিএনপির নেতাদের বলব ঘরে বসে সিরিয়াল দেখ, আন্দোলনে লাভ হবে না।
সুধী সমাবেশে আরও উপস্থিত আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।
এর আগে শনিবার বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে এ উড়ালসড়ক। এরপর এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও আসতে সময় লাগবে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে কাওলা, কুড়িল আর গলফ ক্লাবে থাকবে ওঠার ব্যবস্থা। একদিকে নামা যাবে বনানী, মহাখালী আর ফার্মগেটে। অন্যদিকে তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর যেতে বিজয় সরণি ওভারপাসের দুই প্রান্ত আর বনানী থেকে থাকবে ওঠার ব্যবস্থা। বিমানবন্দর থেকে নামা যাবে মহাখালী, বনানী, কুড়িল এলাকায় ।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার বলেন, কাওলা পয়েন্টে একটা টোল প্লাজা আছে। পরে কুড়িল এবং মহাখালী, বনানী এবং তেজগাঁওয়েতে টোল প্লাজা রাখা হয়েছে। কোন গাড়ির কত টোল
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের জন্য যানবাহনকে চার শ্রেণিতে ভাগ করে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট আসতে সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) টোল ফি (টাকা ও ভ্যাটসহ) নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা। মাঝারি ধরনের ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা, আর বড় ট্রাকের (৬ চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার দিন থেকে এই টোলহার কার্যকর হবে। নির্ধারিত অংশের যে কোনো স্থান দিয়ে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে এ টোলহার প্রযোজ্য হবে।
চলবে না যে সব যানবাহন
সেতু বিভাগের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। গাড়ি নিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পথচারীরা উড়ালসড়কে উঠতে ও চলাচল করতে পারবেন না।
সেতু বিভাগ বলছে, মূল উড়ালসড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর ওঠা-নামার স্থানে (র্যাম্প) সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।
বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেইজ হিসেবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে ফার্মগেট প্রান্ত পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এ পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র্যাম্প রয়েছে ১৫টি। র্যাম্পগুলো হচ্ছে— বিমানবন্দরে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি এবং ফার্মগেটে একটি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি। প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১ হাজার ৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম, ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭.২৮ শতাংশ। প্রকল্পের ভৌত কাজের দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম, ২ হাজার ৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভৌত কাজের অগ্রগতি ৫৪.২২ শতাংশ।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়ালসড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
বার্তা বাজার/জে আই