নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপচে পড়া রোগিদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সদের। বিভিন্ন ধরণের সেবা নিতে আসা রোগীরা ওর্য়াডে সিট না পেয়ে করিডোরে, চলাচলের পথে, ডাষ্টবিন সংলগ্ন জায়গায় সিট পেতে ফ্লোরে অবস্থান করতে হচ্ছে। কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা সেবা প্রত্যাশী রোগিরা।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাত ৮টায় উপজেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ প্রচুর রোগির চাপ। এর মাঝে সিটের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক রোগিকে ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। অনেকে আবার নিঝুমদ্বীপ থেকে এসে সিট না পেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ হয়ে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। এক নবজাতক মাকে দেখা যায় তার এক দেড় বছরের বাচ্ছাকে নিয়ে ফ্লোরে সেবা নিতে। কয়েকটি সিটে দুজন রোগিকে এক সাথে বসে থাকতে ও দেখা যায়।

দায়িত্বরত নার্স ইনচার্জ মোহছেনা আক্তার তামান্না বলেন, আজ কয়েকদিন রোগির চাপ অনেক বেশি। আমাদের বেড সংখ্যার তিনগুন রোগী ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যদিকে রোটেশান মাফিক স্টাফ নার্স সংখ্যা ৩জন। অধিক সংখ্যক রোগীদের একত্রে সমানভাবে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেবা দিতে বিলম্ব হলে রোগীদের দুর্ব্যবহারও শুনতে হয়। সিট না থাকায় অনেককে শুধু ক্যানোলা করে স্যালাইন কিংবা ইনজেকশন শেষ করে চলে বাড়ী চলে যায়। পরের দিন যথারীতি টেক্সী ভাড়া দিয়ে হাসপাতাল এসে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ১জন শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়া কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। ৩১ ডাক্তারের স্থলে টিএস সহ মাত্র ৫ জন ডাক্তার বর্তমানে আছেন। ৪১ জন নার্সের স্থলে ২৮ জনের পদই শূন্য রয়েছে।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, তার ৬০ বছরের অসুস্থ ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিনকে রাত ৮ টায় হাসপাতালে এনে ডাক্তার ভর্তি দিলেও কোন সিটের ব্যবস্থা না পেয়ে একটি পুরাতন ব্যবহত বিছানা চাদর বিছিয়ে খোলা বারান্দায় অবস্থান করতে হচ্ছে। বয়স্ক রোগি ব্যথায় বসে থাকতে পারে না। সিট না পাওয়ায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
বুড়িরচর ইউনিয়নের আবদুল করিম জানান, গতকাল বিকেলে সেবা নিতে আসলে ডাক্তার পরীক্ষা করে টাইফয়েড জরের রিপোর্ট দেয়। পরে তিনি ভর্তির পরামর্শ দিলে কোন সিট না পাওয়ায় সিডির নিছে ডাস্টবিনের পাশে আমার ছোট ভাই দুটি ঢেলান চেয়ার একত্র করে কোন রকম স্যালাইন পুশিং করার ব্যবস্থা করেন।

অনেকগুলো শিশু রোগি ফ্লোরে বিছানা পেতে মায়ের কোলে স্যালাইন নিতে দেখা গেছে। বুড়িরচর ইউনিয়ন থেকে সেবা নিতে আসা ৯ মাস বয়সী মেহেরিমার মা জানায়, মেয়ের ডায়রিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হই। কিন্তু সিটের ব্যবস্থা না থাকায় ওয়ার্ডের দরজার পাশে ফ্লোরে কোন রকমে ক্যানোলা লাগিয়ে বাচ্চাকে স্যালাইন দেয়ার সুযোগ নিয়েছি। কিন্তু বাথরুমের নোংরা পরিবেশ, টয়লেটের দুর্গন্ধ সহ্য করে পথের মধ্যে আজ ২দিন বসে সেবা নিতে গিয়ে নিজেই যেন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি।

আলাপকালে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৌমেন সাহা জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উদ্বোধন হলেও বিগত বছর ধরে কোন ভবন না থাকায় বেড সংখ্যা একই রয়েছে। কেবল মাত্র ৫০জন রোগীর জন্য খাবার ও ঔষধপত্রের সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে হাতিয়ায় জনসংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুরদুরান্তের প্রত্যন্ত এলাকার সেবা প্রত্যাশীরা যানবাহন ভাড়া দিয়ে কষ্টকরে এসেও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শয্যা ও লোকবল বৃদ্ধির বিষয়ে স্থানীয় এমপি মহোদয় এবং সিভিল সার্জন সহ উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই