কুমিল্লার দেবীদ্বারে হঠাৎ নতুন ১৬টি কবরের সন্ধান মিলেছে! বাড়ি ও আশ পাশের লোজন এবং স্থানীয়দের চোখে এ নতুন কবরের দৃশ্য চমকে দেয়। এ কবরগুলো জনমনে নানা সন্দেহ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কবরগুলো দেখতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোকজন ছুটে আসছেন। কবরবাসী কারা? কখন কে কে মারা গেলেন? জানাযা কারা দিলেন? এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই। এসব প্রশ্নের উত্তরেও ধুম্রজাল তৈরী হয়েছে।

স্থানীয় রমিজ মোল্লা নামে এক ব্যক্তি ১৬টি নতুন কবর এবং কবরের ভেতরের মানুষগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করাসহ রহস্য উদঘাটনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমিকে আহ্বায়ক ও পৌর উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ও উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌর সদরের প্রাণকেন্দ্রের নিউমার্কেটস্থ মোল্লা বাড়ির পুকুর পাড়ের গোরস্তানের পাশে।

নিউমার্কেটের প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল লতিফ মোল্লা বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছরেরও আগে দেবীদ্বার নিউমার্কট মোল্লা বাড়ির পুকুর পাড়ে বাঁশঝারের জমি কিনে মার্কেট তৈরি
করে ব্যবসা করে আসছি। আমার মার্কেটের পাশে হঠাৎ এতগুলো নতুন কবর দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়ি। কারা মারা গেলেন, কারা কবর দিলেন? জানাযা, মৃত্যুর বিষয়ে প্রচার- প্রচারনার সংবাদও পাইনি।

দেবীদ্বার মোল্লা বাড়ির রমিজ উদ্দিন মোল্লা জানান, আমার পূর্ব পুরুষদের কবরস্থান যৌথ মালিকানাধিন সম্পত্তির উপর নির্দিষ্ট করা রয়েছে। গোরস্তানের পাশে আমার ৮৭২ খতিয়ানে
৪২৪৮ দাগে ১১১ পয়েন্ট অর্থাৎ প্রায় ২ শতাংশ জমি রয়েছে। উক্ত জমি আর এস, সিএস-এ পুকুরপাড় উল্লেখ রয়েছে। এ জমির উপড়ে থাকা বাঁশঝারটি প্রায় ৫০ বছর পূর্বে কেটে পরিস্কার করে রেখেছি। তাছাড়া পূর্বে এখানে কোন কবর ছিলনা। এরই মধ্যে কে বা কারা আমার জমির উপরের সীমানা প্রাচির ভেঙ্গে ওই জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে ১৬টি নতুন কবর তৈরী করে রেখেছে। আমার ৬৫ বছর বয়সে গোরস্তানের বাহিরে আমার জমিতে কাউকে কবর দিতে দেখি নাই, বাড়ির মুরুব্বীরাও দেখেননি, তাই বিচলিত হয়ে পড়ি। নতুন কবর এবং কবরের ভেতরের মানুষগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছি।

এ ব্যাপারে মোল্লা বাড়ির নজরুল ইসলাম মোল্লা জানান, ভিন্ন কথা, বিএস খতিয়ানভূক্ত ১৮ শতাংশ জমির উপর এ গোরস্তান দু’শত বছরের পুরনো। এখানে নতুন কোন কবর নেই, আমার পৈর দাদা-দাদী, বড় বাবা-বড়’মা, চাচা-চাচী, জেঠা-জেঠিসহ স্বজন ও বাড়ির লোকজনের কবর রয়েছে। আমরা পূর্বপুরুষ ও নারীদের কবরগুলো মাটি দিয়ে উঁচু করে রেখেছি মাত্র।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, সোমবার (২৮ আগস্ট) বেলা ২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। অভিজ্ঞতা হল দেবীদ্বারের কেউ কবরের জায়গা বিক্রি করতে প্রস্তুত, আবার কেউ খালি জায়গায় গায়েবি কবর সৃজন করায় দক্ষতা দেখাচ্ছেন। এ কবরের রহস্য উদঘাটনে ইউএনও মহোদয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সত্যটা প্রকাশ হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, বিষয়টা স্পশর্কাতর তাই এসিল্যান্ডকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তাদের দ্রুত তদন্তস্বাপেক্ষে প্রতিবেদন
দাখিলের নির্দেশ দিয়েছি। রিপোর্ট পেলেই কবরের রহস্য মানে সঠিক কবর নাকি গায়েবি কবর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বার্তাবাজার/এম আই