কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চিরকুট লিখে সন্তানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় শ্বাশুরী ও স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আজ ১৭ মে বুধবার রাতে এই মামলা করেন নিহত জোনাকি বেগমের পিতা রইছ মিয়া। অভিযোগের পর আজ সকালে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর শান্তিপাড়া এলাকার ফারুক মিয়ার স্ত্রী বেবী আক্তার অভিযুক্ত শ্বাশুরীকে(৫৫), আটক করেছে ভৈরব থানা পুলিশ।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানাযায়, ১৫ মে সোমবার উপজেলার শম্ভুপুর পাক্কার মাথা শান্তিপাড়া এলাকার উছমান মেম্বারের বাড়ি থেকে ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়ার স্ত্রী জোনাকী বেগম ও তার শিশুপুত্র আলিফের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে নিহতের পরিবার। পরে তাদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন স্বামী ইতালী প্রবাসী ফরহাদ মিয়া, চাচা শ্বশুর আব্দুল আজিজ মিয়ার মেয়ে কুলসুম আক্তার (২৫), চাচা শ্বশুর শাহীন মিয়া (৫৫) ও মৃত আতর মিয়ার ছেলে উছমান মেম্বার (৪৮)।

জানাগেছে, প্রায় ৬ বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গ্রামের রইছ বাবুর্চির মেয়ে জোনাকি আক্তারকে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকার ইটালী প্রবাসী ফারুক মিয়া ছেলে ফরহাদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। নিহত জোনাকিকে শ্বাশুরী বেবী বেগম শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার করতো। স্বামী ফরহাদ বিবাহের প্রথম দিকে ভাল ব্যবহার করলেও পরে মায়ের প্ররোচনায় স্ত্রী জোনাকি বেগমকে দেশে থাকতে শারীরিক নির্যাতন করতো।

এ বিষয়ে নিহতেরর পিতা রইছ মিয়া জানান, আমার মেয়েকে তার শ্বাশুরী ও স্বামীসহ স্বজনরা দীর্ঘদিন যাবত অত্যাচার করে আসছে। ঘটনার দিন আমার মেয়েকে তার স্বামী যত টাকা লাগে দিয়ে তালাক দিবে বলে ফোনে জানান। আমার মেয়েকে তারা বাধ্য করেছে আত্মহত্যা করতে।

তিনি আরো বলেন আমার মেয়ে চিরকুটে লিখেছে- “ফরহাদ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তেমনি আমার সন্তানকেও ভালোবাসি। তোমার মানষিক নির্যাতন ও তোমার মায়ের শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন আমি সহ্য করতে পারছি না। ফরহাদ তুমি আমাকে তালাক দেয়ার হুমকি দিয়েছো। তোমার মাও আমাকে তালাকের হুমকি দিয়েছে। আমি তোমাদের অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার ভালোবাসার সন্তানকে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করলাম।”

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, নিহতের বাবা বাদী হয়ে শ্বাশুরী ও স্বামীসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছে। ঘটনার দিন একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি নিহতের চিরকুট। চিরকুট থেকেই জানা যায় শিশু সন্তান আলিফকে হত্যা করে জোনাকি আত্মহত্যা করেছে। তবে চিরুকুটে শ্বাশুরী ও স্বামীর অত্যাচারের কথাও লিখা রয়েছে। এ ঘটনায় শ্বাশুরী বেবী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান,মা ও শিশুকে হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা গেছে।

বার্তা বাজার/জে আই