জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশ, কিছু অজানা কথা ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে মিলাদ মমাহফিল’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় কথা বলেন তারা।

অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শুরু হল ইতিহাস বিকৃতি। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর থেকে এই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর সব ইতিহাস নিষিদ্ধ হয়ে গেল। সেই পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষমতালোভী স্বাধীন বাংলায় সেনাশাসনকে বাঙালির বুকের উপর চাপিয়ে দিল।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তরুণ রাজনীতিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “তিন বছর সাত মাসে দেশটাকে যখন স্বাভাবিক করলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হল। এরপর আবার শুরু হল জেল জুলুম হত্যা।

“বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার যেন আর কেউ না থাকে সে কারণে নিষ্পাপ রাসেলকে হত্যা করেছিল এই খুনিরা। পরে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে গগণবিদারী স্লোগান দিয়ে বরণ করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে আমরা ক্ষমতা তুলে দিতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারতাম না।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সুবিল ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মুকুল ভূঁইয়া বলেন, “পঁচাত্তরের পরে খুনিরা মাঝে মাঝেই বন্দুক উঁচিয়ে তাদের বীরত্ব জাহির করত।

দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সুলতানপুর ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হুমায়ন কবির বলেন, “ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিতে নানা কৌশল করেছিল তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানসহ অনেকে। তার আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। জারি করা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

“পঁচাত্তর পরবর্তী সময়টা নতুন প্রজন্মের কাছে বোঝাটা কষ্টকর। কারণ পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ আর এখনকার শেখ হাসিনার বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে চিন্তা করা কঠিন বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল, হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করল, বিচার কাজ বন্ধ করা হল। পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ করল তারা। ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার জন্য নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করা হল।

“জিয়াউর রহমানের আমলটা কেমন ছিল? স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করে বলল, বহুদলীয় গণতন্ত্র। টেলিভিশন থেকে শুরু করে সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল।”

পঁচাত্তরের এই হত্যাকাণ্ড কারবালার ময়দানের হত্যাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে আমেরিকার আব্রাহাম লিংকন, ইন্ডিয়ার মাহাত্মা গান্ধীসহ যতগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম, বর্বরতম হত্যাকাণ্ড এই ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড।

“পৃথিবীর ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড কারবালাকেও হার মানিয়েছে। কারণ ওই সব হত্যাকাণ্ডে অবলা নারী, অবুঝ শিশু, আন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্য করা হয়নি।”

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ আয়োজিত আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সদস্য সচিব এমজেএ মামুনের সঞ্চালনায় ৪ নং সুবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় বক্তব্য দেন দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মো. লুৎফর রহমান বাবুল, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সুলতানপুর ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হুমায়ন কবির, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া মানিক, দপ্তর সম্পাদক হাজী আবুল কালাম আজাদ, ইউছুফপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া, গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোকবল হোসেন মুকুল, ফতেহাবাদ ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মাসুদ ও রসুলপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান সরকার প্রমূখ।

বার্তা বাজার/জে আই