আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেছেন, রাজাকারের বসবাসের জন্য এই দেশ নয়। যুদ্ধ করেছিলাম রাজাকারের বসবাসের জন্য নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের অনুসারীদের বসবাসের জন্য। আজকে রাজাকারদের ভয়ে, আল বদরদের ভয়ে হাজার হাজার পুলিশ রাতে মোতায়েন করতে হয়। একটি দণ্ডিত রাজাকারের (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য। আফসোস, দুঃখ।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টার সময় আমার দুই ছেলে (পুলিশ কর্মকর্তা) চলে যাচ্ছে পোশাক পরে। বললাম কোথায় যাও? বলল পিজি হাসপাতালে যাচ্ছি। কেন? বলল, এরা (জামায়াত) দাঙ্গা–হাঙ্গামা করতে পারে। আমাদের ম্যাসেজ দিয়েছে তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে। কি দাঙ্গা? বলল দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী মারা গেছে। এইজন্য দাঙ্গা–হাঙ্গামা হতে পারে। পরে রাতেই ডিএমপির উদ্যোগে ঢাকার বাইরে থেকে পুলিশ এনে মোতায়েন করা হয়। কেন? এই শঙ্কা কেন আসবে এই দেশে। যে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেখানে কেন ৫২ বছর পর কেন শঙ্কা আসবে এই দেশে?’
তিনি বলেন, ‘এরা কি (জামায়াত) তাহলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাইতেও বেশি ক্ষমতাধর? আমার তো মনে হয় তাই। আমাদের শঙ্কা কেন ৫২ বছর পরে? এই স্বাধীন দেশে? একজন মানুষ মারা গেছে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন মানুষ, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি আমি জানি না। আল্লামা নামধারী। সে কি এতই জ্ঞানী ছিল? বাংলাদেশে সবার ওপরে? তাঁকে পাহারা দেওয়ার জন্য, দাঙ্গা–হাঙ্গামা ঠেকানোর জন্য হাজার হাজার পুলিশ সারা রাত জেগেছে। ভোরবেলা পিরোজপুরে নিয়ে গেছে। ম্যাসেজ আছে, আমার মোবাইলে। সবাই লাঠি–সোঁটা নিয়ে বের হয়ে আসো। এই যে, আহ্বান লাঠি–সোঁটা নিয়ে বের হয়ে আসার। কাজেই এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে সাহস করতে হবে আরও।’
বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘কমিশন হতে হবে। কমিশনের রিপোর্ট হতে হবে, জাতির কাছে সেই কমিশন রিপোর্ট থাকতে হবে। যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে, আমরা এখনো জীবিত আছি। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে। আজকের শোক দিবসে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি, জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য আপিল বিভাগে রায়ে বলা হয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠন, অপরাধী সংগঠন। তাঁদের বিচারের জন্য আইনের ছোট একটি সংশোধনী দরকার। কি সাজা হবে, সেটা কেন হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহলে আপনি জানুন।’
বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার আরও বলেন, ‘আমরা বিচার করতে চাই। কি হবে বিচার করলে? হত্যা করবে? হত্যার বিষয়টি জেনেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমি শেষবার বলতে চাই, এখনো আমার কাছে সময় আছে। বিচার করতে চাই এটার। আমি এই শোক দিবস থেকে দাবি করছি, এই বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। কেন বিচার হচ্ছে না? তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা আছে। সাক্ষী এখনো আছে। বিচার কেন হবে না? এই সূত্রের সঙ্গেই ৭৫’ র সূত্র। এই সূত্রের সঙ্গেই ৭৫’ র অনেক ঘটনা জড়িত। ৫২ বছর পরে হলেও প্রধান বিচারপতি সাহসের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্থাপন করেছেন। আমার অবসরের কয়েক মাস আছে। প্রধান বিচারপতির কাছে আবারও দাবি, এই বিচারটা করার উদ্যোগ নিন। আমাকে যদি বন্ধুক ধরে গুলি করা হয়, যদি বলা হয়—এই বিচার করলে গুলি করা হবে, তবুও বলব বিচার করতে আমি প্রস্তুত।’
বার্তাবাজার/এম আই