উজানের পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হু-হু করে পানি বেড়েছে যার ফলে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। এতে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ছয়টায় পানির লেভেল রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার।।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, বিগত ২৪ ঘণ্টায় পানির লেভেল রেকর্ড রবিবার সকাল ৬টায় ৫১ মিটার দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ মিটার দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার, দুপুর তিনটায় ৫১ মিটার দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার, সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ মিটার দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ছয়টায় ৫২ মিটার দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রোববার রাত থেকে অস্বাভাবিক হারে তিস্তার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়।

এদিকে পানি বৃদ্ধিতে শুধু তিস্তার বাম তীরে পাটগ্রামের আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ ১৫ গ্রামের ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানসহ অন্যান্য ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। ভেঙে পড়েছে চর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, আমন বীজতলা ও ধান ক্ষেত।

তিস্তা ব্যারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে তিস্তাপাড়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদী তীরবর্তী সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

ডালিয়া পানি উন্নায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসাউদ্দৌলা বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষদের সবসময় খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে।

বার্তা বাজার/জে আই