মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলার বয়ড়া ভাটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান চাতক ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হামিদা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ভূয়া ভাউচার এবং পেমেন্ট স্লিপ তৈরী করে স্কুল ফান্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

স্কুল সংশ্লিষ্ট গোপন সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান্ট ( স্লিপ) ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায় বয়ড়া ভাটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্লিপ ফান্ডের নির্ধারিত টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কথা থাকলেও ভৌত কিংবা অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন কাজ না করেই ভূয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করেছে মনিরুজ্জামান চাতক ও হামিদা ইয়াসমিন এমন অভিযোগ নথী ও প্রমান সহ পাওয়া গিয়েছে।

যেসব ভাউচার দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্লিপ ফান্ডের এই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তার সবগুলো ভাউচারই ভূয়া বলে দাবি করেন ভাউচারে উল্লেখিত একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ভাউচারে এমন সব প্রতিষ্ঠানের নামও পাওয়া গিয়েছে, আদতে যে সব প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।

ভাউচারের সূত্র ধরে লেছড়াগঞ্জ বাজারের মাসুদ ইলেকট্রিক এর সত্ত্বাধিকারী মাসুদকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত কিছু মালামালের বিষয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করলে তিনি বলেন, বয়ড়া ভাটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাউচারে যে থার্মাল স্ক্যানার পণ্যের নাম উল্ল্যেখ রয়েছে তা আমি কখনোই বিক্রি করিনি। এমনকি ভাউচারে যে স্বাক্ষর দেয়া আছে সেটিও আমার নয়।

অপর একটি ভাউচারের সূত্রে ঝিটকা বাজারের ভূইয়া সুপার মার্কেটের অনামিকা বিশাল সেন্টারের মালিক কাজী ওবাইদুর রহমান (জুয়েল) কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, ভাউচারের স্বাক্ষরটি আমার নয়। বিদ্যালয়টির নাম উল্ল্যেখ করতেই তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে আরো জানান, হরিরামপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কিছু অসাধু এবং স্বার্থন্বেসী শিক্ষক এবং কর্মচারী রয়েছেন। এরা যতটুকু মালামাল ক্রয় করেন তার চেয়ে বেশী পণ্য এমনকি কখনো কখনো পণ্য না নিয়েও আমার থেকে কেনাকাটার রশিদ দাবী করেন। আমার অবর্তমানে আমার কর্মচারীকে অর্থের প্রলোভন দিয়েও বেশ কিছু ভাউচার তারা নিয়ে গেছে। এসব অসাধু এবং বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য আমি তাদের নিকট পণ্য বিক্রয় ও সরবারহ বন্ধ করে দিয়েছি।

একটি স্টেশনারী ভাউচারের সূত্র ধরে বিকাশ কম্পিউটারে গিয়ে তার সত্ত্বাধিকারী প্রকাশ চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী ববিতা রায়ের সঙ্গে কথোপকথনে তারা বলেন, আমাদের ছোট্ট দোকনটিতে আমি কিংবা আমার স্ত্রী কেউই বসি না। দু’জন মহিলা কর্মচারী রেখে আমরা দোকান পরিচালনা করি। স্কুলের ব্যায় দেখানো প্রায় ১১,১০০ টাকার ২ টা ভাউচারে আমার নামের যে স্বাক্ষরটি আছে সেটি আমার নয়।

বিশদ অভিযোগ এবং অনিয়মের বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হামিদা ইয়াছমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাতক আমার বোনের ছেলে। তিনি কোন অনিয়ম করার কথা নয়। আমি যতটুকু বিল ভাউচার দেখেছি তাতে সব কিছু ঠিক মনে হয়েছে।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান চাতককে মুঠোফোনে সংযুক্ত করা হলে তিনি বলেন, দাফতরিক বিষয়ের কোন কথা থাকলে স্কুলে আসতে হবে। ফোনে কথা বলা সম্ভব নয়। জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

ঘটনার প্রসঙ্গ উল্ল্যেখ করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মাইনুল ইসলামকে জানানো হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি মাত্রই জানতে পারলাম, যথাযথ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ জেলা প্রাথমিক শিক্ষ কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলামকে সবিস্তারে জানানো হলে তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

 

বার্তাবাজার/এম আই/ই.এক্স