রাতের অন্ধকারে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে কলেজ ড্রেস ও শাড়ি পরিহিত শিক্ষার্থীদের হেটে যাওয়ার দৃশ্য বাজার এলাকায় থাকা অনেকের চোখে পড়ে।

বন্ধুদের সাথে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে বাড়ি ফেরা কয়েক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মির্জাপুরের একমাত্র সরকারি কলেজ শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজে সকাল ১১টার নির্ধারিত অনুষ্ঠান শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গিয়ে। একদিকে সারাদিন না খেয়ে থাকার কষ্ট অপরদিকে কলেজের ভেতর শিক্ষার্থীদের আটকে রাখার কারণেই তারা ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে বর্তমানে মির্জাপুরে সর্বমহলে বইছে সমালোচনার ঝড়।

ঘটনা জানতে ওই রাতেই শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গিয়েই দেখা যায় হট্টগোল। দারোয়ানের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন একদল অভিভাবক। কারণ গেইট খোলা নিষেধ। উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের বড়দাম গ্রামের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কিসের অনুষ্ঠান। আমার বাড়িতে সবাই মেয়েকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে । প্রতিবেশিরাও উল্টা পাল্টা ভাবছে। আমাদের না জানিয়ে রাত পর্যন্ত কিসের অনুষ্ঠান, এটা চরম বাড়াবাড়ি!

একাধিক শিক্ষার্থী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খাবারতো দূরের কথা এক গ্লাস পানিও দেয়া হয়নি। ‘অন্ধকার হয়ে গেছে তার মধ্যে আবার বৃষ্টি। বাসে করে যেতে হবে খুব চিন্তায় আছি।

রোভার স্কাউটের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা সারাদিন কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করলাম তারাই কোনও খাবার পাইনি আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি পাবে।

জানা গেছে, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ঘিরে এই উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১ টা ও পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে দুপুর দেড়টায় এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু করতে করতে বিকেল এবং শেষ হতে বেজে যায় সন্ধ্যা ৭.৩০টা।

এদিকে অনুষ্ঠান শেষ করতে রাত হওয়ার বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা অসহায়ত্ব প্রকাশের মাধ্যমে বলেন মানসম্মান নিয়ে চাকুরি জীবন শেষ করতে পারলেই বাঁচি। এই অনুষ্ঠানের ব্যপ্তিকাল ও শিক্ষার্থীদের কলেজ অভ্যন্তরে আটকে রাখায় বিব্রত বোধ করলেও মুখ খুলতে সাহস করেননি কলেজের কেউই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ১৩৬,টাঙ্গাইল-০৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম।

শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা জাহান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে আমি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমার কাছে অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ না থাকায় দেরিতে হলেও অনুষ্ঠানটি করতে হয়েছে। তবে গেইট বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বহিরাগতদের কলেজে প্রবেশ ঠেকাতেই গেইট বন্ধ রাখা হয়েছিলো।

বার্তাবাজার/এম আই