শাশড়ীর শারিরিক ও মানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে এক রশিতে সন্তান ও অন্য রশিতে ঝুলছিল মায়ের মরদেহ। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শম্ভুপুরে শাশড়ীর নির্যাতন সইতে না পেরে শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। নিহত গৃহবধুর নাম জোনাকি আক্তার (৩৫) ও সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশু সন্তান আলিফ। উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকায় আজ সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম মোল্লা। তবে মরদেহের একটি চিরকুট পাওয়া গেছে । চিরকুটটি নিহত জোনাকির হাতের লেখা কি না পুলিশ তা তদন্ত করছে । ঘটনার পর জোনাকির শ্বাশুড়ী ও ননদসহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে নিহত জোনাকি আক্তার ইটালী প্রবাসী ফরহাদ মিয়া স্ত্রী ও আলিফ তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল। অবুঝ শিশু সন্তানসহ মায়ের এমন মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এছাড়াও ঘটনার পর শাশড়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়।

জানাগেছে, প্রায় ৬ বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গ্রামের রইছ বাবুর্চির মেয়ে জোনাকি আক্তারকে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকার ইটালী প্রবাসী ফারুক মিয়া ছেলে ফরহাদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়।

নিহত জোনাকি আক্তারের স্বজনদের দাবী, শাশড়ি বেবী বেগম বিভিন্ন সময় জোনাকি আক্তারকে গরিব পরিবারের মেয়ে বলে উপহাস করতো।

এছাড়াও প্রথম দিকে স্বামী ফরহাদ মিয়া স্ত্রী জোনাকি আক্তারের কথা শুনলেও পরে মায়ের কথায় বেশি সায় দেন। ফলে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক আনতে শারিরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে আসছে তারা। ফলে দুঃশ্চিন্তায় ও যন্ত্রণায় ভূগছিলো জোনাকি।আজ সোমবার সকালে জোনাকি ও তার শিশু সন্তান আলিফকে নির্যাতন করে । নির্যাতনের এক পর্যায়ে মা ও অবুঝ শিশু সন্তান মারা গেলে ২ জনকে ফাসিঁতে ঝুলিয়ে আতœহত্যা বলে অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করে এছাড়াও বিয়ের আগেও ফরহাদএকটি বিয়ে করে বলে নিহত জোনাকির পরিবারের লোকজন জানতে পারেন। শাশড়ীর অত্যাচারে সেই স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়।

নিহতের স্বজনরা আরও জানায়, গতকাল রাতেও মুঠোফোনে শাশড়ির নির্যাতনের বিষয়টি জানিয়ে ছিলো জোনাকি। এমনকি সন্তানসহ তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলেও জানায় সে। তাদের ধারণা শাশড়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে মেরে ফাসিঁতে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আজ সকালে ঘরের দরজা না খোলায় সন্দেহ হওয়ায় দরজা ভেঙ্গে দেখেন এক রশিতে শিশু সন্তান ও অন্য রশিতে মা ঝুলছে। পরে
স্বজনরা তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মা ও সন্তানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান,মা ও শিশুকে হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা গেছে । তবে নিহত ২ জনের
গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃতের প্রকৃত কারন জানা যাবে।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম মোলা, জানান প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্নহত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ঘটনার পর থেকে শাশড়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। তিনি আরও জানান, লিখিত অভিযোগে ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/জে আই