দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাধারণ মানুষের সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবার লক্ষে একটি হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল। ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত এই কলেজটির সামান্য কিছু অবকাঠামোগত কাজ করা হলেও তা বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়। প্রায় চার বছর মোটামুটি ক্লাস চললেও দায়িত্বশীলদের গাফিলতিতে আজ অবদি তা আলোর মুখ দেখেনি।

জানা যায়, ২০০৬ সালে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মারকাজ মসজিদের উত্তরপার্শ্বে হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য প্রকোশলী ফজলুল আজিম নিজ অর্থায়নে ৫১শতাংশ জমি দান করেন হোমিও কলেজের জন্য। পরবর্তীতে জমি ভরাট করণ ও একটি দেয়াল ঘেরা ঘর স্থাপন করার পর আর সামনে এগুতে পারেনি কলেজের কার্যক্রম। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর কোন ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেখানে।

কলেজের শুরুতে ১ম ব্যাচে প্রায় ২৫-৩০ জন ছাত্র ছাত্রী ভর্তী হলেও হাতিয়ার বাহিরে কেন্দ্র হওয়ায় সকলে পরিক্ষা দিতে পারেনি। ২য় ব্যাচে ৩৫-৪০জন ছাত্রছাত্রী ভর্তী হওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দিলেও কলেজ পরিচালনা কমিটির সম্পূর্ণ উদাসীনতায় তারা ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তি ইচ্ছুক এসব ছাত্র ছাত্রীরা পরিবর্তীতে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যায় সম্ভাবনাময় একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল মাঠের এককোনে জরাজীর্ণ অবস্থায় পলেস্তারা বিহীন চাপড়া টিনশেডটি দাঁড়িয়ে আছে। পুরো মাঠ তলিয়ে আছে কোমর পরিমান পানির নিছে। আশপাশের লোকজন তাদের প্রয়োজনে মাঠ থেকে মাটি নিয়ে যাওয়ায় কয়েকটি অংশে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে পঁচা আবর্জনার দুর্গন্ধ সহ সেখানে ডেঙ্গু মশা উৎপত্তিতে সহায়ক হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, প্রতিষ্ঠাতার পক্ষ থেকে ও সরকারি নানা ধরণের অনুদান পাওয়া সত্তে¡ও কমিটির সদস্যদের অবহেলা এবং গাফিলতি পূর্ণ কর্মকান্ড এ ধরণের একটি সম্ভাবনাময় জনহিতকর স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারেনি। তারা আরো বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে যা বরাদ্ধ পেয়েছে তা তারা সকলে ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে।
কলেজ কমিটির সদস্য নুর আলম জসীমের সাথে আলোচনা কালে তিনি বলেন, এখানে কলেজের স্বপ্ন দেখেন হোমিও ডাঃ ব্রজগোপাল। তার দায়িত্ব সে যদি যথাযথ ভাবে পালন করতেন তাহলে কলেজটি অনেক আগেই চালু হয়ে যেত। এখানে আমি তার দায়িত্ব৮ অবহেলা ছিল বলে মনে করি।

হাতিয়া ডিএসএমএস হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস এসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, হাতিয়ায় প্রায় ৩৫ শতাংশ রোগি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহন করে। বিশ বছর আগে হোমিও ডাক্তারের সংখ্যা ১৫/২০জন থাকলেও বর্তমানে তা ২হাজারের উপরে দাড়িয়েছে। এতে অনুমেয় যে কত সংখ্যক মানুষ হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করছে। তবে হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতালটি চলমান থাকলে দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ আরো বেশী উন্নতমানের চিকিৎসা সেবার সুযোগ পেত।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্রজগোপাল বলেন, হোমিওপ্যাথিক বোর্ড খিলক্ষেত ঢাকাতে ৫ লক্ষ টাকা এবং আনুষঙ্গিক আরো ৫ লাখ টাকা রেজিষ্ট্রেশান, ডিমারকেশন, ইন্সপেকশন সহ মেডিকেল যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় খরচপাতি ও পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা না করতে পারায় আলোর মুখ দেখছে না হোমিও কলেজটি। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের কোন ব্যক্তি যদি এর হাল ধরে যথাযথ ভাবে এগিয়ে না আসে তবে সম্ভাবনাময় এই জনহিতকর ও জনবান্ধব স্বাস্থ সেবা থেকে দ্বীপবাসী বঞ্চিত হবেন।

বার্তাবাজার/এম আই