জুলাই মাসে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থেকেছেন। এমনকি রমজান মাসের বেশির ভাগ দিন ইফতার ও সেহ্রির সময়েও বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। অথচ সেই জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল এসেছে আগের মাসগুলোর চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে উপজেলার অনেক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ছুটছেন পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন করে ব্যবহারকারী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে মিটার পরীক্ষা ও পরিবর্তনের আবেদন জমা দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল থেকে রেহাইয়ের সমাধান মিলছে না।
এ প্রসঙ্গে দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্রাবের প্রতিষ্ঠাতা এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন, ‘জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বেশি এসেছে। এ পর্যন্ত একাধিক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী প্রেসক্লাবে এসে আমার কাছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি বিলের অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই আমি বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ডিজিটাল মিটার নিয়ে। প্রায় দুই মাস হলো, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেবীদ্বার উপজেলায় তাদের গ্রাহকদের এ মিটার লাগিয়ে দিয়েছে। শুধু নতুন গ্রাহকদেরই নয়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের পুরোনো গ্রাহকদেরও অ্যানালগ মিটারের বদলে ডিজিটাল মিটার লাগিয়ে দিচ্ছে। দেবীদ্বারে এ পর্যন্ত হাজার খানেক ডিজিটাল মিটার লাগানো হয়েছে বলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, এ মিটারগুলো ত্রুটিযুক্ত। বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ, এমনকি মেইন সুইচ বন্ধ রাখলেও এ মিটারগুলোতে বিল উঠতে থাকে বলে অনেক গ্রাহক জানান।
উপজেলার বুড়িরপার এলাকার রুহুল আমীন  বলেন, ‘ডিজিটাল মিটার লাগানোর পর জুন মাসে ৬৭৩ টাকা বিল এসেছিল। অথচ জুলাই মাসে এত লোডশেডিং সত্ত্বেও বিল এসেছে ১ হাজার ৯২০ টাকা। মেইন সুইচ অফ রাখলেও মিটারে বিল ওঠে। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের একাধিক কর্মীকে ডেকে এনে দেখিয়েছি। তাঁদের পরামর্শেই মিটার পরিবর্তন ও পরীক্ষার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে আবেদন করেছি।’
একই উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মুহুরী বাড়ির সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে একটি ফ্যান, দুটি লাইট ও একটি টেলিভিশন চলে। আগে দেড় থেকে দুই‘শ টাকা বিল আসত। জুলাই মাসের শুরুতে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন পুরোনো মিটার পাল্টে ডিজিটাল মিটার দিয়ে যায় তখনো বিল এসেছিলো ৩৫৩ টাকা। এর পরের মাসে বিদ্যুৎ বিল উঠে যায় ১ হাজার ৫৯২ টাকা।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেবীদ্বার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রেজাউল করিম বলেন, ‘রমজান মাস হওয়ায় জুলাইতে সেহ্রির সময়ে মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া কোরবানীর ঈদে ফ্রিজে গরুর মাংস রাখার কারনে বিদ্যুৎ বেশি খরচ হয়েছে। এ জন্য বিদ্যুৎ বিল অনেকেরই বেশি এসেছে। তবে আগামী মাসে বিদ্যুৎ বিল জুলাইয়ের চেয়ে কম আসবে বলে মনে করি। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে অনেক গ্রাহক আমাকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০ জন করে মিটার পরিবর্তনের জন্য আবেদন করছেন। আর ডিজিটাল মিটারে কোনো সমস্যা নেই। এগুলো যথাযথ পরীক্ষা করেই গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে। তবে দু-একটির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতেই পারে।’
দেবীদ্বার পৌরসভার হোটেল ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন মাসুদ বলেন, ‘ডিজিএম জুলাই মাসে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের যে অজুহাত দিয়েছেন, তা মোটেও ঠিক নয়। আমরা তো প্রায়ই সেহ্রির সময় বিদ্যুৎ পাইনি। এ ছাড়া জুলাই মাসে যে লোডশেডিং হয়েছে, তাতে এক বছরের মধ্যে ওই মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে সবচেয়ে কম।’
বার্তাবাজার/এম আই