তেতুলিয়া নদীর ভাঙনের কবলে ‘নয়ারচর’গ্রাম ৭-৮ বছরে কেউ হারিয়েছে ভিটেবাড়ি, কেউ হারিয়েছে সহায়-সম্বল। তেতুলিয়া নদীর এই গ্রাসে কেউ হয়েছেন নি:স্ব। আবার কেউবা হয়েছেন সম্পদহারা। কিন্তু তবুও জন্মভিটে-বাড়িতে টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। তবে এখন তাদের আতঙ্ক বাঁধ ভাঙার।
ভাঙন কবলিত এই গ্রামটির অবস্থান পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে। স্থানীয়রা জানান, সর্বনাশা এই ভাঙন শুরু হয়েছে ৭-৮ বছর আগে। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের জমি বিলীন হয়েছে । এই ভাঙনের কারণে কেউ কেউ বসতভিটে বদল করেছে তিন-চার বার। তবুও যেন ভাঙন তাদের পিছু ছাড়ছে না।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙনের কারণে নয়ারচর গ্রামের মিটার বাজারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় থাকলে বাঁধটি যেকোন মুহুূর্তে ভেঙে যেতে পারে; বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে হুমকিতে পড়বে ফসলি জমি, শতাধিক বসতবাড়ি ও ১৫-১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই ভিটেবাড়ি আর সহায়-সম্বল টিকিয়ে রাখার জন্য গ্রামবাসীর অর্থায়ণে ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করেছে গ্রামবাসী। এ জন্য কেউ দিয়েছেন গাছ, কেউ দিয়েছেন শ্রম, কেউ আবার অর্থ। নদীর স্রোত যেন বাঁধের ক্ষতি না করতে পারে, এজন্য বাঁধ ঘেঁষে গাছ পুতে দেওয়া হয়েছে। একটি গাছ আবার আরেকটি গাছের সঙ্গে বেঁধেও দেওয়া হয়েছে। মাটি যাতে ভেসে না যায়, এজন্য নেট দেওয়া হয়েছে।
প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের শ্রমে বাঁধ রক্ষার এই কাজ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, তিন দফায় বাঁধটি সংস্কারের কাজ করা হয়। সবশেষে গতবছর নয়ারচর গ্রামের এই বাঁধটি নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার বাঁধটির বেশ কয়েকটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার বাসিন্দা কালাম কাজি (৭০) বলেন, ‘এই বাঁধের কারণে ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ ভেসে যায়। বার বার বাঁধ ভেঙে যায়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি বাঁধটি মজবুত করে মেরামতের।
ওই গ্রামের মান্নান ফকির (৬০) বলেন, ‘ভাঙনে একেকজনে কয়েক বার করে ভিটেবাড়ি বদলাইছে। আর কতবার এরকম ভিটা বদলাইতে হইবে আল্লাহ জানে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নয়ারচর বাঁধের অবস্থা নাজুক। বেশি খারাপ অবস্থা মিটার বাজার এলাকায়। সেই অংশের বাঁধ ভেঙে গেলে পুরো নয়ারচর জোয়ারে তলিয়ে যাবে। তখন এই এলাকার দুই হাজার পরিবার বিপদে পরবে। তাই বাঁধটি মেরামত প্রয়োজন। স্থানীয় লোকজন বাঁধ রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অস্থায়ী।’ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ অবশ্যই মেরামত করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, বিষয়টি জেনে আমি ইতোমধ্যে উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে আমাদের লোক যাবে। বাঁধ পরিদর্শন করে সার্ভে করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বার্তাবাজার/রাহা