বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা-এর প্রভাবে বেড়েই চলেছে জোয়ারের পানি এবং বাতাসের তীব্রতা। দিনের জোয়ারে চাইতে রাতের জোয়ারে বাড়তে পারে পানি। ফলে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

হুমকির মুখে আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ। ফলে আটকা পড়েছেন হাতিয়ার নলচিরা, তমরদ্দি ও চেয়ারম্যান ঘাটের হাজার হাজার যাত্রী। নিঝুমদ্বীপ, সোনাদিয়া, তমরদ্দি, চরকিং, সুখচর, নলচিরা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ হরনী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের জাহাজমারা টাংকির ৫৪ নং ¯-ুইসের বেড়িবাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গা থাকায় বড় জোয়ার এলে বেড়িবাঁধসহ ¯¬ুইসটি তলিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

রবিবার সকাল থেকে সারাদিন বৃষ্টি, বাতাস এবং নদীর ঢেউ সমানতালে বয়ছে। ঢেউয়ের মাত্রা সাধারণ সময়ের থেকে বেশি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক এবং শংকা তৈরী হয়েছে। আজ সকাল থেকেই উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত দুইশত ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয়দের যাওয়ার প্রবণতা কম থাকলেও প্রত্যেকেই শিশু, বৃদ্ধসহ কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বলছেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর তথ্য মতে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার দুপুর থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সামান্য দুর্বল হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিনাজ উদ্দিন বলেন, ৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ফলে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হন। ঘূর্ণিঝড় মোখায়ও নিঝুমদ্বীপে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশংকা করছি।

হাতিয়া উপজেলার নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর উল্লাহ শিবলু বলেন, নলচিরা এলাকায় বাতাসের গতিবেগ অনেক বেড়ে গেছে। আমার ইউনিয়নে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেলে নলচিরার অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

জানা যায়, হাতিয়ার মোট ১১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর চিত্রাং এর সময় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাধ সংস্কার করা হলেও এখনো বেশ কিছু যায়গায় জোয়ারের পানি বাড়লে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মানুষের চোখেমুখে ঘুর্ণিঝড় মোখার ভয় এবং আতংক বিরাজ করছে। দিনভর স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করে ও সাইরেন বাজিয়ে স্থানীয়দের আশ্রয় কেন্দ্্ের যাওয়ার জন্য আহবান জানালেও নিজেদের মালামাল রেখে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেনা। তবে বেড়িবাঁধের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা জনবসতিগুলো নিজেরা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কায়সার খসরু জানান, সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। হাতিয়ায় ২৪২ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। মেডিকেল টিমসহ একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। বেড়ীবাঁধের বাহিরের লোকজনকে ভিতরে নিয়ে আসা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই