পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। কারাগারে আটক থাকা অবস্থাতেই তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতির কড়া সমালোচনা করেছেন এবং তীব্র ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন, ‘তাকে ফিল্ড মার্শাল নয়, বরং ‘রাজা’ উপাধি দেওয়া উচিত ছিল। কারণ বর্তমানে পাকিস্তান চলছে জঙ্গলের আইন দিয়ে।’
ইমরান খানের এই বক্তব্য সামনে আসে বৃহস্পতিবার (২২ মে), যখন তিনি আদিয়ালা কারাগারে আইনজীবী, সাংবাদিক এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একইসাথে, এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মেও তিনি জোরালো ভাষায় দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তার পদোন্নতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
‘জঙ্গলের রাজা’ মন্তব্যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উত্তপ্ত
তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে, দেশের শাসনব্যবস্থা এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে ন্যায়বিচার কেবল দুর্বলদের জন্য, ক্ষমতাশালীদের জন্য নয়। ইমরান খান আরও বলেন, ‘আমি আগে কখনো নিজের জন্য কিছু চাইনি, এখনো চাই না। তবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য খোলাখুলিভাবে আলোচনার দরকার আছে। যদি সত্যিই দেশকে বাঁচাতে চায় সামরিক প্রতিষ্ঠান, তাহলে আসুন সরাসরি আলোচনায় বসি।’
সেনাপ্রধানের পদোন্নতিতে বিভক্ত পিটিআই
দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করার পর পিটিআই দলে অভ্যন্তরীণ বিভাজন তৈরি হয়েছে। একদিকে ইমরান খান সরকারের সমালোচনায় মুখর, অন্যদিকে দলের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান গওহর আলী খান নবনিযুক্ত ফিল্ড মার্শালকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই দ্বন্দ্বে ইঙ্গিত মিলছে যে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি পিটিআই’র ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলে প্রভাব ফেলতে পারে।
ড্রোন হামলা ও বাহ্যিক হুমকির নিন্দা
আদিয়ালা জেলে দেওয়া বক্তব্যে ইমরান খান আরও বলেন, ‘খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ড্রোন হামলায় নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারের উচিত এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং প্রতিক্রিয়া জানানো।’তিনি সতর্ক করে দেন, ‘দেশ এখন বহিরাগত হুমকি, সন্ত্রাসবাদ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারকে সংলাপে আসতে হবে, কিন্তু কোনো চুক্তির কথা আমি মানি না – এসব গুজব, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশন ‘বুনইয়া-নুম-মারসুস’-এ নেতৃত্বের জন্য পাকিস্তানের মন্ত্রীসভা জেনারেল আসিম মুনিরকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ উপাধিতে ভূষিত করে। পাকিস্তানের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই মর্যাদা পেলেন।
বার্তাবাজার/এসএইচ