স্বাধিকার আন্দোলনের পর ২৪শের প্রেক্ষাপট যে সবচেয়ে বড় এই কথাটা নতুন করে বলার কিছু নাই। অনেকগুলো দিক বিবেচনা করলে, ২৪শের আয়তন বেশ ভালো ভাবেই নজর আন্দাজ হয়। তারমধ্যে অন্যতম একটা দিক হচ্ছে নেতৃত্ব। খেয়াল করলে দেখা যাবে, বিগত দুই দশকের রাজনৈতিক পরিব্যাপ্তি একটা নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আশি কিংবা নব্বই দশকে প্রভাবশালী হয়ে উঠা কিছু রাজনৈতিক চরিত্র এবং ব্যক্তিবর্গের বাহিরে এদেশের রাজনীতির পরিমন্ডল নিজ ক্রমবর্ধমান বাস্তবতায় রূপ নিতে পারছিলো না। কোথায় পরিবারতন্ত্র তো কোথাও স্বামীর রেখে যাওয়া উত্তোসূরীও রাজনৈতিক পরিব্যাপ্তি। গণতন্ত্র চর্চার আতুর ঘরেই যখন স্বজনপ্রীতির প্রথা চর্চিত হয়ে আসছিলো, তখন এমন একটা অভ্যুথান কেবল একটা শাসন ব্যবস্থাই নয়, বরং রাজনীতি চর্চার জন্য ভিন্নমত ও প্রথাকে উন্মুক্ত ময়দানে সুযোগ করে দিলো। যেখানে শ্রেণী পেশার বিভেদ, ধর্ম বর্ণের পার্থক্য বাদ দিয়েই একজন সুনাগরিক তার চিন্তার ও চেতনার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পেতে পারে।

সবচাইতে বেশী গুরুত্ব দিয়ে দেখার মতো একটা বিষয় যা নজরে এসেছে। ছোট পরিসরে প্রায় সব স্তরেই নেতৃত্বের একটা জোয়ার এসেছে। খোলাসা করে বললে, পূর্বে কেবলমাত্র ঐক্যবদ্ধ একটা চক্র রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করতো। সেটা নৈতিক কিংবা অনৈতিক তার প্রশ্ন পরের স্তরে আসবে। বরং এখানে যেটা দেখা যাচ্ছে, শ্রেণী বিণ্যাস করে প্রায় প্রতিটি স্তরে ছোট ছোট সুবিধাভোগী তৈরী হয়েছে। যারা অন্য কোন পেশা বা গোত্রভূক্ত কাউকেই পাত্তা না দিয়ে নিজ নিজ স্তরে সুবিধা ভোগ কিংবা আদায় করে যাচ্ছেন। উদাহরণ সমেত বলা যায়, ফুটপাতের চাঁদাবাজরা আগে অঞ্চল ভাগ করে প্রতিটি স্তর থেকে চাঁদা গ্রহন করতেন। বাস ট্রাক ট্রলি রিক্সা মুট কুলি হকার সবার উপর ছিলো একজনের সমান অধিকার। যা বর্তমানে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে শ্রেণী ও পেশাভিত্তিক অধিকারে পরিবদল হয়েছে। মানে বাসের চাঁদা তুলবে বাস সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী কেউ। একইভাবে ট্রাক ট্রলি কন্টিনার রিক্সা সবার জন্য আলাদা আলাদা অধিকর্তা নিয়োজিত রয়েছে। তাদের আলাদা জমায়েত রয়েছে। যেখানে তারাও সুখ দুঃখ ভাগ করে নেয়ার নগরের কষ্টার্জিত অর্থের ভাগ বুঝে নেয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এরা কারা। উত্তরটা চোখে দেখা গেলেও মুখে বলা যায় না। কারন মুখ খুললেই যেটা বের হবে, সেটা প্রমাণের জন্য যথাযথ দস্তাবেজ দরকার। আইনী প্রকৃয়া এবং বিচারিক নির্দেশনা দরকার। অদ্ভুত হলেও সত্য, চোখের সামনে আপনি আমি খুন দেখার পরও খুনিকে আদালতে সোপর্দকরার সময় বলাহয় অভিযুক্ত। তারপর একটা বিরাট আইনী জটলা। যেখান থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে আসা যায় যথাযথ অর্থ কিংবা যোগাযোগ থাকলে। এই যে এতো এতো বিশ্লেষণ বিন্যাস তার সবটুকুই কিন্তু বিশেষ ব্যক্তিবর্গের নজরে নগরিক ভাবনার খোরাক তুলে দেয়ার জন্য। যা সম্মূখে আসলে হয়তো পরিশুদ্ধতায় কেউ আসবে অথবা আসবে না। তবে একটা বিষয় কিন্তু দিবালোকের সত্য যে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস ঘেঁটে কোথাও এতো দ্রুত বর্ধনশীল রাজনৈতিক মোর্চা তৈরী হতে দেখা যায় নি। যেখানে আপামর সাধারণ ছাত্রজনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো। ফলে এতো বৃহৎ মানুষের আকাঙ্খার সঙ্গে আদতে কি আচরণ করা হবে তার দায়ভার বিপ্লবীদেরকেই নিতে হবে।

বৈষম্য আর নীপিড়নের দোহাই দিয়ে যে মোর্চা গড়ে উঠেছিলো। তাতে যে অগণিত স্বার্থস্বেশী ভূতপ্রেত ভর করেছে এটা আলাদা করে না জানালেও চলবে। তবে বৈষম্যবিরোধীদের উচিত তদবীর বনিজ্যের বদলে আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পুরোদস্তর মনোযোগী হওয়া। বন্দরবন্ধু পরিচয়ের চেয়ে জনবন্ধুর পরিচয় যে ঢের সম্মানের এই উপলব্ধি তৈরী হওয়া উচিত। কারন একটা বিপ্লব কেবলমাত্র একটা সরকার কিংবা লুটতরাজের শাষনব্যবস্থাকেই ধ্বংস করেছে এমন নয়। সেই সাথে অনেকগুলো রাজনৈতিক চরিত্রের জন্ম দিয়েছে। অনেকগুলো ব্যক্তি এবং আলাদা আলাদা চর্চার চিন্তার পরিমন্ডল জন্ম দিয়েছে। যে দেশের রাজনীতি কেবল মাত্র ব্যক্তির বন্দনা কিংবা ইতিহাসের শোকার্ত অধ্যায়ের অতিচর্চিত ইতিহাস বারবার রোমন্থনের গন্ডিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সেই গন্ডি ভেঙ্গে একটা নতুন পরিমন্ডল তৈরী হয়েছে কথামালা সৃষ্টি করার। প্রতিচর্চায় নাগরিকের নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু উঠিয়ে আনার। বিশেষ করে দলের বাহিরে গিয়ে প্রতিটা নাগরিককে তার রাষ্ট্রীয় মালিকানা বুঝিয়ে দেয়ার। যেখানে সাধারণ নাগরিক কতিপয় দল মতের পরিবর্তে একজন নাগরিক হিসেবে বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবে।

ইতিকথনে বলতে চাই, রাজনৈতিক চরিত্রের চিরায়িত অভ্যাসের বাহিরে গিয়ে যদি এই প্রজন্ম নতুন কিছু দেখাতে না পারে। তাহলে পুরনো প্রবাদ সকল বিপ্লবীর ওপর যথার্থ। ভিক্ষা চাইনা কুত্তা ফিরান।

 

ই.এক্স/ও.আর/বার্তা বাজার