সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় সালিশি আলোচনায় নিজ পক্ষে বিদ্যালয়ের সাবেক দুই প্রধান শিক্ষক ও প্রেসক্লাব সভাপতি রাখার অনুরোধ করায় এক নারী শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুলের বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী জামতৈল ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শারীরিক শিক্ষিকা মোছাঃ সালমা খাতুন গত ২২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৬ এপ্রিল এক সহকর্মীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির ঘটনায় বিদ্যালয়ের মধ্যে আলোচনা বসে, যেখানে সহকর্মী শাহানা পারভীন তাকে জুতা ছুঁড়ে মারেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক জানান, বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছে এবং তিনি আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন। ২২ এপ্রিল ইউএনও কার্যালয়ে গেলে, সালমা খাতুন নিজের পক্ষ থেকে তিনজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি রাখার কথা বলেন – সাবেক দুই প্রধান শিক্ষক ও প্রেসক্লাব সভাপতি। এ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউএনও তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, ভয়ভীতি দেখানো এবং ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অফিসের লোকজন দিয়ে জোর করে বের করিয়ে দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
শিক্ষিকা সালমা খাতুন বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন তাকে মানসিকভাবে চাপে রেখেছেন এবং ইউএনও’র কাছে ক্ষমা চাইতে বলছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইউএনও থাকলে চাকরি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না এবং হয়রানি আরও বাড়বে। তার ভাষ্য, ‘আমাকে যদি জোর করে সরি বলাতে নেয়, তাহলে আমি ট্রেনে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করবো।’
সহকারী শিক্ষিকা শাহানা পারভীন বলেন, আমি জুতা ছুঁড়তে নিয়েছিলাম, কিন্তু মারিনি। উল্টো সালমা আমাকেই ছুঁড়েছে। আমি ওর চেয়ে ১৪ বছরের সিনিয়র এবং সেদিন অসুস্থও ছিলাম। স্যরি বলার চাপ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি তাকে ইউএনও’র কাছে স্যরি বলতে বলিনি, মানসিক চাপও দিইনি।
প্রাপ্ত অভিযোগ এর বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুলকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি, এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তারও কোনো উত্তর মেলেনি। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রোজিনা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা আছে। ডিসি স্যার আসার পর অভিযোগটি পর্যালোচনা করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৬ই মে উপজেলা কেন্দ্রীয় মসজিদের ছয়টি এসি বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল। এতে স্থানীয় মুসল্লীদের তোপের মুখে পড়ে ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই এসি চালু করে দিতে তিনি বাধ্য হোন। সেদিনের ঘটনাটি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আসলে কামারখন্দ উপজেলাসহ জেলা জুড়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন এই সরকারি কর্মকর্তা।
বার্তাবাজার/এসএইচ