এশিয়ান মহাসড়কে চলাচল করা নীলাচল পরিবহনের হেলপারের সাথে হাফ ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় এক জাবি শিক্ষার্থীর। এরই জের ধরে ৯ টি বাস আটকে রাখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তবে বাসগুলো ছেড়ে দিতে মধ্যস্থতা করা ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মহাসড়কের দু’পাশে বাসগুলো আটকে চাবি নিয়ে যান শহীদ সালাম-বরকত হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশ শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে নয়টায় তারা বাসগুলো ছেড়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান (হিরন) রোববার সকালে মানিকগঞ্জের উথুলী এলাকায় যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের সামনে থেকে নীলাচল পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। ১২০ টাকা ভাড়ার জায়গায় তিনি হাফ ভাড়া ৬০ টাকা দিতে চাইলে বাসচালকের সহকারী ১০০ টাকা দাবি করে। এনিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিরন দাবি করেন তাকে বাস চালকের সহকারী ধাক্কা দেয় এবং মারতে উদ্যত হয়। সেই ক্ষোভে ক্যাম্পাসে ফিরে তিনি তার হলের সহপাঠী এবং জুনিয়রদের নিয়ে বেলা ২টা থেকে বাস আটক শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টায় হঠাৎ দিকে বাসগুলো ছেড়ে দেন তারা।

তবে আটক হওয়া বাসচালকদের সূত্রে জানা গেছে, ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বাসগুলো ছাড়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাস আটকের পর নীলাচল পরিবহনের চেকার মো. ফয়সাল ও সাভারের বিএনপির এক নেতার আত্মীয় বেলালসহ বাসের কয়েকজন প্রতিনিধি ক্যাম্পাসে আসেন বিষয়টি সমাধান করার জন্য। এসময় ফয়সাল বাস চালকদের কাছ থেকে মোট ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর শাখা ছাত্রদলে নেতা নবীনের সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের সাথে শহীদ মিনার এলাকায় টাকার বিষয়ে মীমাংসা হলে বাস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বাস ছেড়ে দেয়ার মুহূর্তে ঘটনা স্থলে প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থত হন। বিষয়টি কীভাবে সমাধান হলো জানতে চান চেকার ফয়সালের কাছে। তখন ফয়সাল অসামঞ্জস্য কথা বলতে থাকেন। টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফয়সাল ভয় পেয়ে যান। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রক্টর অফিসে আনতে চাইলে সে দৌড়ে পালিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকা নীলাচল পরিবহনের একটি বাস ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে এবং টাকা লেনদেনের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

এরপর রাত সাড়ে এগারোটায় বাস আটকের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । এসময় তারা টাকা লেনদেনে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেন প্রক্টর। ফুটেজে দেখা যায়, বাসের চেকার ফয়সাল, বেলালসহ নীলাচল বাসের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে বসে ছাত্রদলের নেতা নবীনুর রহমানের সঙ্গে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে তারা হেঁটে হেঁটে সেন্ট্রাল ফিল্ডের দিকে চলে যান।

বাস আটকের সাথে জড়িত ছাত্রদলে একাধিক কর্মী জানান, বাস আটকের পর থেকে আমাদের টাকা লেনদেনের বিষয়ে প্রলুব্ধ করছিল নবীনুর রহমান। তবে আমরা শুরু থেকে টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানাই। তবে হঠাৎ রাতে নবীন ভাই বাসের প্রতিনিধিদের সাথে এসে বাস ছেড়ে দিতে বলেন আমাদের। এরপর প্রক্টর স্যারকে আমরা বাস ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়ে আমরা বাস ছেড়ে দেই। তবে কোনো টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমরা জানি না।

চাঁদা নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা নবীনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটি ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বাস আটকে রেখেছিল। সেটা নিয়ে আমার পূর্বপরিচিত বেলালসহ কয়েকজন ক্যাম্পাসে আসেন। আমি তখন তাদের বলি শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করে সমাধান করতে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করে অনুরোধ জানালে তারা বাসগুলো ছেড়ে দেন। টাকা—পয়সার লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

তবে প্রথমে তিনি বাস আটকে সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের বাস ছেড়ে দিতে অনুরোধের কথা অস্বীকার করেন। তবে সেই শিক্ষার্থীরা তারা নাম বলেছে বললে এক পর্যায়ে বাস ছেড়ে দিতে অনুরোধের কথা স্বীকার করেন নবীন। এদিকে আটক করা বাস ছাড়িয়ে নিতে সোমবার ক্যাম্পাসে আসেন বাস মালিক মোস্তফা। তিনি জানান, ‘চেকার ফয়সালকে আমি বাস ছাড়াতে ক্যাম্পাসে আসতে বলি। তবে সে আমাকে জানায় চাকরি ছেড়ে দিলেও জাহাঙ্গীরনগরে আসবে না।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বাস আটকের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তারা বাস ছেড়েও দিয়েছে। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাস কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে এসে আমাদের না জানিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেছে। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অসামঞ্জস্যতা তথ্য পেয়েছি। চেকার ও বাস মালিকদের সাথে আজকে আমাদের বসার কথা। সকালে বাসের মালিক এসেছিলেন তবে অভিযুক্ত চেকার ফয়সাল না আসলে সমাধান হবে না বলে জানিয়েছি। তাকে নিয়ে আসলে আমরা আলোচনায় বসব।’

 

বার্তাবাজার/এসএইচ