লিমন মন্ডল (রতন), বয়স ৩৭। ছোটবেলা থেকেই ঔষধের ফার্মেসিতে কাজ করতো। স্বপ্ন ছিল একদিন নিজেরও একটি ফার্মেসি হবে। সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হাটছিল রতন। অবশেষে একটু একটু করে জোগাড় করা আয়ের টাকা দিয়ে একটি দোকানও ভাড়া নেয়। দু’-একদিনের মধ্যে সেখানে ঔষধ উঠানোর কথা।

কিন্তু রতনের সেই স্বপ্ন আর সত্যি হবে না। নিভে গেছে তার জীবন প্রদীপ। শনিবার দুপুরে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের হিন্দু গ্রামে অবস্থিত শ্বশুর বাড়ি থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে কেন কি কারণে তার মৃত্যু এনিয়ে এলাকায় ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
রতনের পরিবারের দাবি তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। সে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়েছে। আর রতনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবি দাঁতে ব্যাথার যন্ত্রণা সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে রতন। দুই পরিবারের এই দুই বক্তব্য নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, পরকীয়ার বিষয়টি তারাও শুনেছে। কিন্তু মৃত্যু কিভাবে হয়েছে্যএটি তারা এখনও নিশ্চিত নয়। তাই সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, রতন গলাচিপা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তপন মন্ডলের ছেলে। ৭ বছর আগে রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের হিন্দু গ্রামের বাসিন্দা জাদব সমাজপতির মেয়ে তৃপ্তি রানীকে বিয়ে করে তিনি। এই দম্পতির ঘরে অতুষী নামের ৪ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
বিয়ের পর থেকে ফার্মেসিতে কাজ করার সুবাধে প্রথম পটুয়াখালী ৪ বছর এবং পরে বরিশালে ৩ বছর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেছিলেন রতন। পরে নিজেই ফার্মেসি দিতে দেড়-দুই মাস আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। চরমোন্তাজের চরআন্ডা খেয়াঘাটে এজন্য একটি দোকান ভাড়া নেন। সেই দোকানে ঔষধ উঠানোর জন্য এবং লাইসেন্স করতে ভাই মিঠনকে নিয়ে বরিশাল যাওয়ার কথা ছিল।

চরমোন্তাজ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণ চরমোন্তাজ) ইউপি সদস্য মোশাররফ মাতুব্বর বলেন, ‘ফার্মেসির লাইসেন্স করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার কাছ থেকে পরিচয়পত্র এবং এর দুইদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিল রতন। সেই ছেলেটা কিভাবে মারা গেল বুঝতেছি না।’

রতনের ভাই মিঠন মন্ডল বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না। আমার ভাইর সাথে দুইদিন আগে কথা হয়েছে। তারা (রতনের শ্বশুর বাড়ির লোক ও স্ত্রী) বলতেছে দাঁত ব্যাথা করছে, গলায় রশি দিছে। একটা মানুষ এভাবে এমনেতে কিভাবে গলায় রশি দেয়? আমার কাছে সন্দেহ হয় আমার বৌদির সাথে একজনের পরকীয়া সম্পর্ক আছে। আমার দাদা (ভাই) এটা একাধিকবার ধরছে। তিন-চারদিন আগে আমার সাথে যখন দাদার কথা হয়, তখন সে এই কথা বলছে। বিয়ের আগে বৌদির সাথে ওই ছেলের সম্পর্ক ছিল। এখন আবার কথা হয়। বরিশালে গিয়ে ওই ছেলে থাকেও। আমার দাদাকে ওই ছেলে বেশ কয়েকবার হুমকিও দিছে। আমি ছেলের পরিচয় জানি না।’

এদিকে রতনের স্ত্রী তৃপ্তি রানী বলেন, ‘দাতের যন্ত্রণায় শুক্রবার রাতে আমাকে বলছে গরম পানি করে খাওয়াতে আমি খাওয়াইছি। দাঁত ফুলে উঠছে, এজন্য ঔষধ আনছে-খাইছে। ভাত খাইছে, খবর দেখছে। তারপর মেয়েকে নিয়ে একসাথে ঘুমাইছে। সকালবেলায় উঠে দেখি সে গলায় রশি দিছে।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘রতনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা জানতে লাশ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সব বেড়িয়ে আসবে। রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন অপমৃত্যু একটি মামলা হয়েছে। এনিয়ে তদন্ত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি ভোর ৫ টার। আমরা সাড়ে ৭টা-৮টার দিকে খবর পেয়েছি। আমরা গিয়ে ঘরের মেঝেতে লাশ পেয়েছি। আমাদের অনুসন্ধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মান অভিমান থাকতে পারে বলে অফিসার শুনেছে। প্রাথমিকভাবে গলায় দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

বার্তা বাজার/জে আই