জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অর্থ কেলেঙ্কারির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাগোনিউজ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে হুমকি প্রদান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অপেশাদার শব্দচয়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কর্মরত গণমাধ্যমের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকবৃন্দ।

রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রধান সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।

এসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে বাংলাদেশে আমরা ছাত্র রাজনীতির মৌলিক সংস্কার এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে একজন সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদ জানাতে। কোনো সংবাদে ত্রুটি থাকলে সেটি সংশোধনের জন্য যথাযথ প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা না করে সংবাদপত্রের ওপর পেশিশক্তি প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলা ফ্যাসিস্ট আচরণের বহিপ্রকাশ।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কর্তৃক প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে যে অশোভন ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি বড় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন অপেশাদার আচরণ এমন হলে, সারাদেশে থাকা অন্যান্য নেতাকর্মীদের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে বলছি, ছাত্রদল তাদের বক্তব্যের ভাষা সংশোধন করবে এবং দলের ভেতরে যে অপকর্ম হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি’র আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, গত ১৫ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা তাদের কলম চালিয়ে গিয়েছে। আপনারা যারা নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতেছেন আপনাদের ভয় ভীতি এই সাংবাদিকদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্রদল যে ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এটা স্পষ্টত স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হস্তক্ষেপ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যে বিবৃতি দিয়েছে তা অন্যান্য ইউনিটগুলোকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আরো উদ্ভুদ্ধ করবে। আপনারা যদি ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চান তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা রুখে দাড়াবে

সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী মামুন বলেন, সারা দেশে জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার অন্যতম উৎস ছিল এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রথম গুলির সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল আমাদের সহকর্মীরা। আজ যখন এই সহকর্মীদের মানসিকভাবে নিপীড়ন করা হয়, তখন আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ থাকে না। আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতেই হয়, দাবি জানাতেই হয়। আমাদের কাজ ছিলো কীবোর্ডের সামনে বসে সংবাদ লেখা। কিন্তু আজ সেই দায়িত্ব ছেড়ে মানববন্ধনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, গত ১৫ বছর আপনারা যে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে গেছেন, তখন সাংবাদিকরাই ছিলেন আপনাদের একমাত্র বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনাদের বক্তব্যে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা আশা করেছিলাম, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভুলত্রুটি নিরূপণ কর গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে আপনারা সেই পুরনো ফ্যাসিস্ট কায়দায় সাংবাদিকদের ট্যাগ দিয়েছেন । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা দাবি জানাই—আপনারা অবিলম্বে এই ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং ক্ষমা চাইবেন।

প্রসঙ্গত, , গত ২৪ এপ্রিল জাগোনিউজ২৪.কমে- ‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ বাটোয়ারার দ্বন্দ্বে জাবিতে ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিতের কারণ হিসেবে অর্থ বণ্টন নিয়ে শাখা ছাত্রদলের একজন যুগ্ম-আহ্বায়ক, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং অনুদানের আড়ালে সাবেক এক আওয়ামীলীগ এমপিকে পুনর্বাসন চেষ্টার বিষয় উঠে আসে। তবে প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে সময়ের আলো’র জনৈক স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ জাগোনিউজ২৪, কম- এর জাবি প্রতিবেদক সৈকত ইসলামকে নানাভাবে জেরা করেন ও হুমকি দেন। পরে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পত্রিকা অফিসে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়া হয় ও রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কর্তৃক প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অপেশাদার শব্দচয়ন করা হয়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাবি প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি সহ দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ