শরীয়তপুরের ডামুড্যায় কিস্তিতে নিজে জামিনদার হয়ে টাকা উঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিবেশীকে। সেই টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভ্যান চালক ও তার পরিবারের লোকজনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মারাত্মক জখমের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ডামুড্যা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। তবে ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কথা কিংবা পরিবারের কাউকে চিনতে পারছেন না আহত রফিকুল ইসলাম।
ঘটনাটি গেলো মাসের (৩১ মার্চ) ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের সুতল কাঠি গ্রামে ঘটেছে। হামলায় মারাত্মক জখম ভ্যান চালক রফিকুল ইসলাম (২৫), তার বাবা ইয়াছিন মাল (৪৮)। এ ঘটনায় তার স্ত্রীও আহত হয়েছেন। পরে রফিকুলের বাবা বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে ডামুড্যা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নিজামুদ্দিন চৌকিদার (৫২),আজিজুল চৌকিদার (২০),রোজিনা আক্তার (৩৫),মঙ্গল চৌকিদার (৬০),মাকসুদা বেগম(৪৫),মাহিনুর বেগম (২০),কহিনুর বেগম(১৯) বিরুদ্ধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত দুই বছর আগে আহত রফিকুল এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ব্যাংক থেকে নিজে জামিনদার হয়ে নিজাম উদ্দিন চৌকিদারকে চল্লিশ হাজার টাকা লোন তুলে দেয়। টাকা নিয়ে নিজাম উদ্দিন সহ তার পরিবার ঢাকায় পালিয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন রফিকুল বাড়তে থাকে এনজিওর কিস্তির চাপ। একাধিকবার নিজাম উদ্দিনকে টাকার জন্য চাপ দিলেও নিজাম টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঈদ উপলক্ষে নিজাম উদ্দিন গ্রামে আসলে গত ৩১ মার্চ সকালে ঈদের নামাজ পড়ে আসার সময় মসজিদের পাশেই নিজামের সাথে দেখা হয় রফিকুলের। পূর্বের টাকা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে স্থানীয় মুসল্লীদের উপস্থিতিতে বিষয়টি সাময়িক মিমাংসা হয়। এরপর রফিকুল বাড়ীতে আসার পথে হটাৎ নিজাম উদ্দিন ও তার লোকজন মিলে লাঠিসোঁটা ও দেশিও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রফিকুল ও তার পরিবারের উপর হামলা চালায়। হামলার একপর্যায়ে পিছন থেকে রফিকুলকে মাথায় আঘাত হরা হয়। এতে ঘটনাস্থলে রফিকুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রথমে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সদর হাসপাতালে রেফার করে। সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হলেও এখনো জ্ঞান ফেরেনি রফিকুলের। অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসক জানিয়েছেন রফিকুলের মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় চারটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অপারেশন করাতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা জোগাড় করে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পরিবারের কাউকে চিনতে পারছেন না আহত রফিকুল। অন্যদিকে একটি হাত ও একটি পা ইতিমধ্যে বিকল হয়ে গেছে। এদিকে একমাত্র উপার্জন করা রফিকুলের পরিবার ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। টাকার অভাবে খাবার কিংবা ঔষধ কিনতে পারছেন না পরিবার।
মামলার বাদী ইয়াছিন মাল বলেন, আমার ছেলে রফিকুল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। দুই বছর আগে আমাদের পাশের বাড়ীর নিজাম উদ্দিনকে নিজে জামিনদার হয়ে চল্লিশ হাজার টাকা লোন তুলে দেয়। সেই টাকা নিয়ে নিজাম উদ্দিন পালিয়ে যায়। নিজাম কে না পেয়ে টাকার জন্য আমার ছেলেকে চাপ দিতে থাকে এনজিওর লোকজন। এনিয়ে গত ঈদের দিন সকালে মসজিদে নামাজ শেষে নিজামের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর হটাৎ করে নিজাম লোকজন নিয়ে আমার ছেলের উপর হামলা চালায়। ছেলেকে বাচাতে এগিয়ে গেলে আমাকে ও আমার ছেলের বউয়ের উপর হামলা চালায়। আমি মামলা করতে থানায় গেলে ওসি সাহেব মামলা নিতে চায় নি। আমাকে দুই তিনদিন ঘুরিয়ে মামলাটি নেয়। পরে শুনতে পারি মামলার এজাহার দুর্বল করে আদালতে প্রেরন করে। এতে আসামিরা একদিনে জামিন পেয়ে যায়। আসামিরা জামিনে বের হয়ে নিয়মিত মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকিধামকি দিচ্ছে। আমি নেয় বিচার দাবি করছি।
আহত রফিকুলের স্ত্রী লিজা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে অন্যায় ভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আজ একমাস হয়ে গেছে সে কথা বলতে পারে না। কাউকে চিনতে পারছেন না। তাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমার শশুর, শাশুড়ী ননদ ও একটি চার বছরের সন্তান রয়েছে তাদের নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। না পারছি ঔষধ কিনতে না পারছি বাজার খরচ চালাতে। আমার স্বামী ছাড়া উপার্জন করার মতো কেউ নেই। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমার স্বামীর উপর হামলা কারিদের বিচার চাই।
বিষয়টি জানতে অভিযুক্তদের বাড়ীতে গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, হামলার ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিরা জামিনে রয়েছে। তদন্ত চলছে আদালতে সঠিক রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
বার্তাবাজার/এসএইচ