জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই প্রশাসনের আরও দুই স্তরে পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। প্রথম দফায় উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব এবং পরে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হবে। যুগ্ম সচিবের ক্ষেত্রে নিয়মিত হিসেবে বিসিএস ২২তম এবং উপসচিবের ক্ষেত্রে ২৯তম ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে আগে পদোন্নতিবঞ্চিত এবং অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও আমলে নেবে পদোন্নতির জন্য সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।

এসএসবির সদস্যরা আগে বেশ কয়েকটি বৈঠকের পরও ১২, ১৩, ১৫ ও ১৬ জুলাই বৈঠক করেছেন। দুই স্তরের পদোন্নতি দিতে অন্তত ৮০০ কর্মকর্তার কর্মজীবনের সব নথিপত্র যাচাই-বাছাইসহ সার্বিক পর্যালোচনা করছেন তাঁরা। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। এরপর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, বর্তমানে যুগ্ম সচিবের ৩৩২টি পদে আছেন প্রায় ৭২৪ কর্মকর্তা, যা পদসংখ্যার দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়া ৪৩০টি সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮টি, কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭০০ জন। এ পদেও কর্মকর্তার সংখ্যা পদের চেয়ে কয়েক শ বেশি। শূন্য পদ না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত অধিকাংশ কর্মকর্তাকেই যথারীতি আগের পদে রাখা হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘পদোন্নতি প্রশাসনের রুটিন কাজ। ইতিমধ্যে এসএসবির বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আরও দু-একটি বৈঠক করা লাগতে পারে। তবে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি শিগগিরই হবে। উপসচিবেরটা একটু সময় লাগতে পারে।’

জানা যায়, বিসিএস ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। সে হিসাবে তাঁরা ছয় বছর ধরে এ পদে থেকে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ ব্যাচের ২৪৫ জন ছাড়াও ইকোনমিক ক্যাডার থেকে একীভূত হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে এসেছেন আরও ৩৯ জন। তাঁরাসহ সাড়ে ৫০০ কর্মকর্তার কর্মজীবনের নথিপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত বিভিন্ন ব্যাচের শতাধিক এবং অন্যান্য ক্যাডারের দুই শতাধিক কর্মকর্তা আছেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির বিষয়সহ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত এবং স্বজনদের রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্রমতে, উপসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য ২৯তম ব্যাচের ১৮৯ জন, বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার এবং আগের বঞ্চিত অন্তত ৫০ জনসহ প্রায় আড়াই শ কর্মকর্তার তথ্য বিশ্লেষণ চলছে। ২৯তম ব্যাচ ২০১১ সালের ১ আগস্ট সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। আগামী মাসে তাঁদের চাকরিতে যোগদানের এক যুগ হবে। ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তাই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর বাইরে গত ৪ এপ্রিল উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত অন্যান্য ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেলে ন্যূনতম পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১০ বছর চাকরি পূর্ণ করেছেন, তাঁদের তালিকাও চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে তাঁদের সব তথ্য পাওয়া গেছে। সব ঠিক থাকলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ পদে পদোন্নতি হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেক কর্মকর্তার কর্মজীবনের সব নথি আলাদাভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

বার্তাবাজার/এম আই