শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপির স্থানীয় দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এক পক্ষ চায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাছ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক। আর দলটির আরেক পক্ষের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। নড়ীয়ায় পদ্মা নদীতে ৬ এপ্রিল থেকে ৩০টি খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নড়িয়ার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ও ফসলি জমি ভাঙনের হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

একটি পক্ষ নড়িয়ার মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল,অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। তারপরও বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় আজ রোববার নড়িয়া উপজেলা সদরে আবারও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ওই কর্মসূচিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ ওরফে রয়েল ও তাঁর অনুসারীরা। এনিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সকাল ১০ থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ১৪৪ জারি করেছেন নড়ীয়া উপজেলা প্রশাসন।

নড়িয়ার সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির একটি পক্ষ গতকাল শনিবার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করেছে । এই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন আহম্মেদ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এস এম ফয়সাল, ঢাকার কলাবাগান থানা মহিলা দলের সভাপতি শামীমা জামান। আর এই কর্মসূচিটি প্রতিহত করার ডাক দিয়ে উপজেলা বিএনপির আরেকটি পক্ষ রাতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিল শেষে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বৈধ প্রক্রিয়ায় নিলামে কেনা বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অপর পক্ষকে দায়ী করেন। তিনি ওই পক্ষকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।

সম্প্রতি চরের স্তূপকৃত ১০ কোটি ঘনফুট বালু নিলামে বিক্রি করে উপজেলা প্রশাসন। নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা দিয়ে ওই বালু কেনেন। বালু সরিয়ে নেওয়ার কার্যাদেশ পাওয়ার পরই ফরিদ আহমেদের লোকজন পদ্মা নদীর চর আত্রা ও চর নড়িয়া এলাকায় ৩০টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন বলে অভিযোগ।

বিষয়টি জানতে নড়ীয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েলের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি ফোনটা রিসিভ করেন নি। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন মাঝি বলেন, ‘নড়িয়ার মানুষ নদীভাঙনের কথা শুনলে আঁতকে ওঠেন। কারণ, এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বালু উত্তোলন করলে বাঁধ ঝুঁকিতে পড়বে, এমন আশঙ্কা আছে। তাই আমরা নড়িয়ার মানুষ চাই পদ্মা নদী থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক। এ কারণে জনগণের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তা প্রতিহত করার ক্ষমতা কারও নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে স্থানে বালু নেওয়ার জন্য চিহ্নিত করে দিয়েছি, সে স্থানের বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ এসেছে। নিলাম নেওয়া ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়েছে। তারা যদি নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না করে, তাহলে নিলাম বাতিল করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বালু উত্তোলনের বিষয়টি এখন আর ওই ইস্যুতে নেই। তারা এখন রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের দিকে যাচ্ছে। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে কিছু সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজ সকল ধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখা হবে।’

 

বার্তাবাজার/এসএইচ