কিশোরগঞ্জে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফাতেমা জোহরা আক্তারকে বিশেষ অতিথি করে ছাত্র, সাংবাদিক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। এ নিয়ে জেলায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা হয়। সভার ব্যানারে লেখা ছিল ‘রাষ্ট্র বাঁচাতে প্রয়োজন সংস্কার, সমঝোতা ও নির্বাচন’। মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন মো. জহিরুল ইসলাম, সভাপতিত্ব করেন সোহেল আহমেদ ও প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত কাইয়ুম। এতে অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক বিমল সরকার, অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন, খাইরুল মোমেন স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে প্রয়োজনে যার তার সঙ্গে সমঝোতা করব। এমন বক্তব্যের পরই উপস্থিত এক সাংবাদিক মঞ্চে বসা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফাতেমাতুজ জোহরাকে দেখিয়ে হাসনাতকে প্রশ্ন করেন, তার মানে আওয়ামী লীগের সঙ্গেও সমঝোতা করতে আপনি রাজি? এর জন্যই আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মঞ্চে এনেছেন?

এসময় জববে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আমাদের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কিংবা রাষ্ট্রচিন্তার দুইটারই ঘোষিত শত্রু আছে। একটা হচ্ছে গণহত্যাকারী কিংবা গণহত্যাকারীর আদর্শ যারা লালন করে। আরেকটা হচ্ছে যারা পাচারকারী। আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামী দুইটা দলকে আমরা মনে করি গণহত্যাকারী দল। আমরা দুইটা শত্রুর সাথে আসলে কখনো ঐক্যবদ্ধ হবো না। এই বিষয়ে আমরা একমত।

তখন এক সাংবাদিক জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ফাতেমা জোহরার মতবিনিময় সভার মঞ্চে বসা এবং বক্তব্য রাখার ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করলে অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আমার জানা নাই আসলে এখানে আওয়ামী লীগের কোনো সহ-সভাপতি আছে কি না। ফাতেমাতুজ জোহরা তার পজিশন ক্লিয়ার করবে। আমরা যদ্দূর জানি, আমরা যখন থেকে সংস্কারের আলাপ করছিলাম, সংস্কারের রাজনীতি করছিলাম, তখন থেকে আমরা দেখছি তিনি আমাদের রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল। উনি আওয়ামী লীগের পদ পদবীতে আছে বলে আমি শুনি নাই। যদি থাকে তাহলে ওনারটা উনি পরিষ্কার করবেন। আর এই না জানার জন্যে আমি আপনাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতেছি, ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

হাসনাত কাইয়ূমের বক্তব্য শেষে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফাতেমা জোহরা বলেন, আমি মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পরিচয় কখনো দেইনি। কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। মিটিং, মিছিলে কোনো দিন যাইনি। আমি সবসময় উইম্যান চেম্বারের পরিচয়ে চলেছি। আওয়ামী লীগের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘে সফরসঙ্গী হওয়ার বিষয়ে তখন তাকে প্রশ্ন করা হলে ফাতেমা জোহরা বলেন, আমি এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘে গিয়েছি। মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ। আমি পদত্যাগ না করলেও আওয়ামী লীগের পরিচয় আমি দেই না।

স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ফাতেমাতুজ জোহরার স্বামী মৃত অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং পিপি ছিলেন। আর ফাতেমা জোহরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে এখনো দায়িত্বে আছেন। ফাতেমা জোহরা কিশোরগঞ্জ থেকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়নও চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনি জেলা উইম্যান চেম্বারেরও সভাপতি। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে জোহরা দম্পতির ঘনিষ্ঠতার কথা কিশোরগঞ্জে বেশ পরিচিত।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ