পদ্মা নদীর বুকে ড্রেজার মেশিনের গর্জনে কেঁপে উঠে শরীয়তপুর জেলার নড়ীয়া উপজেলার সুরেশ্বর সহ একাধিক গ্রাম। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আগামী বর্ষায় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে নদীভাঙন। ইতিমধ্যেই নদীপাড়ের হাজারো পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৫ হাজার ঘরবাড়ি বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে।

নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, একটি প্রভাবশালী মহল প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং কখনও কখনও তাদের সহযোগিতায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে গভীর রাত পর্যন্ত বালু তোলা হয়, যার ফলে নদীর তলদেশ অসমভাবে ক্ষয় হয়ে তীরবর্তী এলাকার মাটি দুর্বল হয়ে পড়ছে। শুধু বসতবাড়ি নয়, স্কুল, বাজার, কৃষিজমি ও কবরস্থানও নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অথচ বারবার অভিযোগ দিয়েও টেকসই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদী তীর রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, এইভাবে নদী থেকে বালু তুললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হবে এবং আগামীতে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে স্থানীয় মানুষদের। নদীর যে অংশে বালু উত্তোলন হচ্ছে তার কাছেই দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধ। যে বাঁধ রক্ষা করেছে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলাকে। অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এতে আতঙ্কিত পদ্মা পাড়ের মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধ না হলে ব্যাপক নদী ভাঙনের পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়বে তীর রক্ষা বাঁধ। বালু উত্তোলন বন্ধে নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে বালু উত্তোলনের এই মহোৎসবে মেতেছেন নড়িয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল, আজাহার শিকারি, তারা মিয়া ও জাজিরার রফিক খাঁ, ফয়জলসহ আরও অন্তত ১০ থেকে ১২ জন।

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম, নাসিম গাজি ও শাহ আলম বলেন, “আগে নদী ছিল অনেক দূরে, এখন ঘরের পাশে এসে গেছে। প্রতিদিন রাতে ড্রেজারের শব্দ শুনি। ভয় হয়, না জানি কখন বাড়ি নদীতে ভেঙে পড়ে।” “গত ৩-৪ বছর আগে আমাদের ঘর ভেঙে গেছে। এখন এখানে এসে বাড়ী করেছি। এখন এখানেও যদি বালু উত্তোলন করে আমরা কোথায় যাব?” বিএনপির নেতারা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত আমরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারি না ভয়ে। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ আমাদের রক্ষা করেন।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ফরিদ আহমেদ রয়েল বলেন, সরকারের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করি। প্রশাসন আমাকে অনুমতি দিয়েছে। সরকার যেহেতু টেন্ডার দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখুক।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.তারেক হাসান বলেন,‘তীর রক্ষা বাঁধের কাছেই যদি ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে নদী পাড়ের মানুষ ঝুঁকিতে থাকবে।’ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের সাথে আমরাও কাজ করছি।

নড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শর্ত সাপেক্ষে পদ্মা নদীর নড়িয়ার কেদারপুর ও সুরেশ্বর এলাকার নদীর বাম তীরের বালু অপসারণের জন্য নিলাম করা হয়। নিলামকারীরা শর্তের নিয়ম ভঙ্গ করে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। তাই সরেজমিনে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে আটটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা ড্রেজারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ