বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, নগদ মিথ্যা বলা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো অর্জন বা অগ্রগতি নেই। তাদের একমাত্র সাধনা ক্ষমতা অর্জন। ক্ষমতা লাভের আগে বা পরে কোনো সময়ই তারা ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করে না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে হাস্যকরভাবে অসত্য বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বোকা ও অবুঝ ভেবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও জনগণ এটাকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করবে না।
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কণ্ঠরোধ করার নানা কালো আইন, গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যার অমানবিক নিষ্ঠুরতা সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শিশু, কিশোর-কিশোরী, অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণী ও লেখক, সাংবাদিক শুধু ভিন্নমত প্রকাশের জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দানবীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। কিশোরী খাদিজা প্রায় বছর খানেক ধরে কারাগারে ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ সে জামিন ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশকে এখন এমন একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনার হুকুম ছাড়া জামিনও মেলে না। এখানে হাইকোর্টের জামিনও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিত রাখে। এটি বিশ্বে নজীরবিহীন। যত উচ্চ আদালতে আবেদন করা যায় ততই ভুক্তভোগী মানুষ নিষ্কৃতি পায়, শুধু বাংলাদেশেই ব্যতিক্রম।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার আর কোনো অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছে না। ওবায়দুল কাদের তাই মিথ্যার সংস্কৃতি নির্মাণ করে তাদের নেতাকর্মীদের সাহস জোগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সারাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ। রাষ্ট্রের দমনযন্ত্রের প্রয়োগ আর কোনো কাজে লাগবে না। এবার জনগণ স্বৈরাচারী দানবকে বোতলবন্দি করবেই।
‘আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই- হত্যা, হিংসা, হানাহানির পথ থেকে সরে আসুন। যারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নারকীয় আক্রমণ চালাচ্ছে তাদের স্থিরচিত্র, ভিডিও মানুষের হাতে হাতে। কোনো অপরাধীই বিনাবিচারে পার পেয়ে যায় না। বাংলাদেশে সরকারি মদদপুষ্ট ঘৃণ্য দুষ্কৃতকারীদের বিচার হবেই।’
গত পরশু থেকে গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত হওয়ার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঝিনাইদহ জেলা যুবদলের সদস্য ও পাগলা কানাই ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন মন্ডল তার সহযোগী যুবদল নেতা সন্তুর মোটরসাইকেল নিয়ে ঝিনাইদহ শহর অভিমুখে যাচ্ছিলেন। তিনি পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের কাছাকাছি পৌঁছালে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সাঈদের নেতৃত্বে যুবলীগ সন্ত্রাসী রাজন, তৌফিক, শাহিন, আজম, আনোয়ার, আনিস, লিটন, ওবায়দুর, লিমনসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বর্বরোচিত হামলা করে। সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে লিটন মন্ডলের ডান হাতের কবজি কেটে নেয়, তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা মারাত্মক জখম করে।
“এছাড়াও গতকাল ১৩ জুলাই তারিখে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব তন্ময় হাছান ও ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাতকে কাঞ্চন পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আইয়ুব এর নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে।’নোয়াখালীতে “দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রায়” অংশ নিতে যাওয়ার সময় কুমিল্লার মুরদানগর ও দাউদকান্দি উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দের বহন করা যাববাহন লাকসাম পৌরসভার রেল জংশন এলাকা থেকে শুরু করে বাইপাস রোডের দক্ষিণ মাথা পর্যন্ত গাড়ী ভাংচুর করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারা কুমিল্লা, নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম—মনোহরগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহাড়া দেয়।
তিনি বলেন, গত ১৯ মে থেকে এ পর্যন্ত পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৩০০টি মামলায় ১০ হাজার ৩০০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার নেতাকর্মীকে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বার্তাবাজার/এম আই