লালমনিরহাটে মহান স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিস্মারক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) টিআইবি এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। মূলত দ্বিতীয়বারের মতো এ ঘটনার পর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে সংগঠন দুটি। এর আগে ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চের দেয়ালে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও একই রকম ঘটনা ঘটে।
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সনাকের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সদস্যরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহিদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন তারা। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) লালমনিরহাট শাখার সহসভাপতি ও লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও অবদানে আমরা এ দেশ পেয়েছি। তাদের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এ অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ বলেন, স্মৃতিস্মারকটি চলমান সময়ের জন্য অনুপযুক্ত হলে ভেঙে দেওয়া হোক। সারা বছর ম্যুরালটি সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে বিশেষ বিশেষ দিনে কাপড় দিয়ে ঢেকে সার্কাস না করাই ভালো।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। সনাকের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল ইসলাম বীরপ্রতীক বলেন, ওই ম্যুরালে বায়ান্ন থেকে ৭১ পর্যন্ত ধারাবাহিক ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ওই ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার গঠন, স্বাধীন ভূখণ্ডে নব রবির উদয়, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয়ে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, জাতীয় পতাকা হাতে উল্লাসিত জনতা ইত্যাদি।
বার্তাবাজার/এস এইচ