যশোরের সরকারি একটি মুরগির খামারে সম্প্রতি বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের পর আবারও বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় খামারিদের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শিল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এ ফ্লু বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৩ মার্চ যশোরের একটি সরকারি খামারে এই ফ্লুর সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যশোরের খামারটি পরিদর্শন করেছেন এবং ফ্লুটি কীভাবে বাংলাদেশে এসেছে, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

এ সম্পর্কে যশোরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, যে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেটি হলো এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-এ। তিনি জানান, এই ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাবে খামারটিতে তিন হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে এক হাজার ৯০০টি মারা গেছে। ফ্লু যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য বাকি মুরগি মেরে ফেলা হয়।

বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান বিপিএর

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সম্প্রতি যশোরে একটি খামারে বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১) শনাক্ত হওয়ার পর দেশের পোল্ট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ওই খামারে তিন হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে এক হাজার ৯০০টি মারা গেছে এবং বাকি মুরগি মেরে ফেলা হয়েছে, যাতে ভাইরাস আরও ছড়িয়ে না পড়ে। অতীতে আমরা দেখেছি, বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে, লাখ লাখ মুরগি নিধন করতে হয়েছে এবং হাজার হাজার খামারি তাদের জীবিকা হারিয়েছেন।

সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবার ২০০৭ সালের মার্চে বার্ড ফ্লু দেখা দেয় এবং সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি মেরে ফেলা হয়। ওই সময় বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার ৩৭০টি খামার বন্ধ হয়ে যায় এবং খামারিরা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হন। পরবর্তী বছরে, ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশের মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ব্যাপক ক্ষতির পর, খামারিরা দীর্ঘ সময় ধরে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে আবারও বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটে, তবে এইবার তেমন বড় আকারে ক্ষতির মুখে পড়েনি পোল্ট্রি শিল্প। তবে ২০১৭ সালের শেষের দিকে আবারও বেশ কিছু এলাকায় বার্ড ফ্লু দেখা দেয়, যার ফলে বেশ কিছু খামার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসব প্রাদুর্ভাবে, প্রায় ৫০ লাখ মুরগি নিধন করতে বাধ্য হয় এবং আরও কিছু খামার বন্ধ হয়ে যায়। বারবার বার্ড ফ্লু সংক্রমণের আক্রমণ সর্বমোট প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে যায়

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে এই নতুন প্রাদুর্ভাবের কারণে খামারিদের আর্থিক ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ রোধে খামারিরা প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যয় করেছে এবং অনেক খামার তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, এবং যদি সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে আরও খামার বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।

এ অবস্থায় বিপির পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, সরকার এবং পোল্ট্রি খাতের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের একযোগে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে খামারিরা বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। খামারের প্রবেশপথ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, অসুস্থ মুরগি বাজারে বিক্রি করা যাবে না, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন এবং খামারের আশপাশে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে সরকারকে বাজারে মুরগির বিক্রিতে কঠোর নজরদারি চালানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে কোনো খামারি অসুস্থ মুরগি বাজারে বিক্রি না করতে পারে। তা ছাড়া বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানাচ্ছে, যাতে আক্রান্ত এলাকাগুলোর দ্রুত তদারকি করা যায় এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।