২০১০ সালের ২৬শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করে মহানগর জামায়াতে ইসলামী। চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর ভারতের ব্যবহারের অনুমতি এবং ইসলামী রাজনীতি নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত ওই সমাবেশ ছিল চট্টগ্রামে জামায়াতের সবচেয়ে বড় শোডাউন। তবে এটিই ছিল চট্টগ্রামে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আয়োজিত সর্বশেষ আউটডোর সমাবেশ। ওই বছরই নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীসহ শীর্ষ জামায়াত নেতারা আটক হয়ে কারাগারে যান। মূলত সেই সমাবেশের পরই সারা দেশে জামায়াতের উপর সরকারের খড়গ নেমে এসেছিল। এখন সেই লালদীঘির মাঠেই সমাবেশের মধ্যদিয়ে প্রকাশ্যে আসতে যাচ্ছে বন্দর নগরের রাজনীতিতে এক সময়ের ছড়ি ঘোরানো দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আগামী ২২শে জুলাই (শনিবার) দুপুর ২টা থেকে নগরের কোতোয়ালি থানাধীন লালদীঘি ময়দানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আর সমাবেশে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইতে আগামী রবি বা সোমবার তারা একটি প্রতিনিধি দলকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠাবেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, কারাবন্দি শীর্ষ নেতাদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতির টার্গেট নিয়েছে তারা।
জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে সারা দেশের মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও বিপাকে পড়ে জামায়াত। একপর্যায়ে আত্মগোপনে চলে যায় নেতাকর্মীরা। এরপর নিত্য নতুন কৌশল বের করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা চালায় দলীয় কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে গোপন ও ভার্চ্যুয়াল প্রোগ্রামের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করছে তারা। এরমধ্যে সম্প্রতি আমেরিকার ভিসা নীতি যেন শাপে বর হয়েছে দলটির। একমাস আগে পর্যন্ত বাসায় বসে প্রোগ্রাম করতে গিয়েও পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। আর তারাই গত জুন মাসে রাজধানীতে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শোডাউন করেছে।
এতে বড় ধরনের উপস্থিতি দেখে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে দলটির নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা। জামায়াতের সূত্র বলছে, রাজধানীতে গত ১০শে জুনের সমাবেশের পর চট্টগ্রামে ১৫ই জুলাই সমাবেশের কথা ছিল। এরপর ২২শে জুলাই সিলেট হয়ে বাকি সাংগঠনিক বিভাগগুলোতে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে হঠাৎ করে ১৬ই জুলাই চট্টগ্রাম বিএনপির উদ্যোগে শ্রমিক মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। মাত্র একদিন পরেই ‘বন্ধ’ বিএনপির সমাবেশ হওয়ায় জামায়াত তাদের চট্টগ্রামে সমাবেশ পিছিয়ে ২২ তারিখ করার সিদ্ধান্ত নেই। আর আজ ১৫ই জুলাই সিলেটে এই সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের প্রধান এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি। নগর জামায়াতের এক মজলিশে শূরার সদস্য নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, লালদীঘির মাঠ অনেক ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত।
আগামী ২২ তারিখ এই লালদীঘির মাঠে নতুন এক ইতিহাস রচনা করতে চায়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করবো। এই সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত। এই সপ্তাহের শুরুতে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিবো। আশা করি আমরা উনাদের সহযোগিতা পাবো। জানা যায়, সমাবেশে সফল করতে এরমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে নগর জামায়াত। সমাবেশ সফল করতে করা হয়েছে সমন্বয় কমিটি। থানা থেকে ইউনিট পর্যায় পর্যন্ত ঈদ পুনর্মিলনীর আড়ালে করা হচ্ছে সমাবেশের প্রস্তুতি সভা। তাদের সহযোগী সংগঠন শিবির ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনও সমাবেশ সফল করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। জামায়াতের আরেক সূত্র বলছে, তারা যেকোনোভাবেই লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করতে চায়।
তবে প্রশাসন লালদীঘিতে অনুমতি না দিলে পুরাতন রেলস্টেশনে তারা সমাবেশ করবে। কেন্দ্র থেকে তাদেরকে সেভাবেই প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা নগরের দেওয়ানবাজারে অবস্থিত মহানগর কার্যালয় খোলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা। সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আ জ ম ওবায়েদ উল্লাহ বলেন, জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক দল। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে আমরা আগামী ২২ তারিখ লালদীঘির মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ একটা সমাবেশ করবো। সাংবিধানিক অধিকার হিসবে আমরা আশা করছি প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে প্রশাসনের সহযোগিতা পাবো। প্রসঙ্গত, জামায়াতের তৎকালীন আমীর গোলাম আজম আদালতের আদেশে নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার পর ১৯৯৪ সালের ২৬শে জুলাই লালদীঘি ময়দানে সংবর্ধনার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জামায়াত। আর সে সময় তাকে প্রতিরোধের ডাক দেয় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন। একপর্যায়ে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে প্রতিরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত লালদীঘি ময়দানে গোলাম আজমকে সংবর্ধনা দেয় জামায়াত।