শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ সদস্যকে দুঘণ্টা অবরুদ্ধ করে জীবননাশের হুমকির অভিযোগ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সরদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। এনিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারে একটি ভিডিও প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনর সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই যুবদল নেতাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক কমিটির জেলা শাখার সংগঠক মাহাবুব আলম জয়।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধীদের অবরুদ্ধের ঘটনার ২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থী এবং যুবদলের সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন সরদার ও তাঁর লোকজনের কথোপকথন হচ্ছে। একপর্যায়ে আনোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী মাহাবুব আলম জয়কে হুমকি-ধামকি দিতে দেখা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গণমাধ্যম ও স্থানীয় মাধ্যমে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম ও দুরবস্থার সম্পর্কে জানতে পেরে গত ১১ মার্চ দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে যায় জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফয়সাল হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব ফারহানা জাহান দিপ্তি, সংগঠক মাহাবুব আলম (জয়), সদস্য আশরাফুল ইসলাম মাসুম ও রায়হান।
পর্যবেক্ষণ করে অনিয়ম ও দুরবস্থার সত্যতা পাওয়ার পর বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান মিয়ার কক্ষে বিষয়টি অবহিত করতে যান শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি অবহিত করার সময় সেই কক্ষে থাকা গোসাইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্লিনিক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সরদার (৫০), বিএনপি নেতা শিমুল সরদার (৫৬) ও ওষধ কোম্পানির প্রতিনিধি শাহ আলম সরদার (৫৪) সহ ২৫/৩০ জন লোক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক কমিটির পাঁচ সদস্যকে দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দুঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। এসময় গায়ে হাত দিয়ে লাঞ্চিত করে, জীবননাশের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধীরা। এ ধরনের জনসেবামূলক কাজ করতে কোথাও যেন না যায়, এমন হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাদের। পরে অবরুদ্ধ রাখার খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানার পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে।
গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান মিয়া বলেন, ‘১১ মার্চ দুপুরে ছাত্রদের সঙ্গে কি হয়েছে, এবিষয়ে আমি মন্তব্য করবো না ।’
ভুক্তভোগী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র মাহাবুব আলম জয় ও ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি হাসপাতালের পরিবেশ খুবই খারাপ, রোগীদের যে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেখানেই রোগীর পাশেই রাখা হয় ময়লা আবর্জনা এবং চিকিৎসকও নেই। এছাড়া অন্যান্য বিষয় তো আছেই। সেই বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. হাফিজুর রহমান স্যারের কাছে গেলে যুবদলের সাবেক নেতা আনোয়ার ও তাঁর লোকজন আমাদের দুইঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। হত্যার হুমকি দিয়ে ছাদে নিয়ে উলঙ্গ করে বেধে রাখবেও বলেন তারা। পরে আমরা জেলার আহবায়কে বিষয়টি জানালে তিনি গোসাইরহাট থানার ওসি স্যারকে জানায়। এরপর পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। এঘটনার সঠিক বিচার পেতে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবেক যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ‘একটি ভিডিও ফেসবুকে আসছে। সেখানে নেগেটিভ কথাগুলো রেখে, পজিটিভ কথাগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রদের ওপর সাধারণ জনগণ ক্ষিপ্ত ছিল। পরে একটু রাগারাগি করে পরিবেশ ঠাণ্ডা করি। ছাত্রদের ভুল বুঝানো হয়েছে, ওরা ভুল বুঝছে। আমি ছাত্রদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলা শাখার আহবায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, ‘গণমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে আমরা জানতে পারি গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন চিকিৎসকের জায়গায় দুইজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাছাড়া সাধারণ নাগরিকরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরে আমরা সেখানে স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিদের পাঠাই। হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম পায় তারা। সেই বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে আমাদের প্রতিনিধিদের অবরুদ্ধ করে হেনস্তা ও হত্যার হুমকি দেয় উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ও তাঁর লোকজন। এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে, তাহলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে তদন্ত করব। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বার্তাবাজার/এস এইচ