শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় দিন দিন কৃষি জমির উর্বর মাটি কমে যাচ্ছে। কোথাও কৃষি জমি কেটে বানানো হচ্ছে পুকুর ও মৎস্য প্রকল্প। এছাড়া এসব কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটাতে। আবার অনেকে কৃষি জমির মাটি দিয়ে গড়ছেন বসতবাড়িও। রাত ৮ টা থেকে ভোর পর্যন্ত এধরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও নজরদারি নেই প্রশাসনের । এনিয়ে বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও এখনো অবৈধভাবে মাটি বিক্রি বন্ধ করতে পারে নি উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে, একের পর এক কৃষি জমি থেকে এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। আবার অন্যদিকে কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণও। তবে প্রশাসন লোকদেখানো অভিযান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। প্রশাসন মূল হোতাদের ধরতে না পারায় বার বার একই কাজ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা। দিনরাত সমানতালে শত শত ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে সরকারি রাস্তা। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ময়নাল খান, বিএনপি নেতা আমজাদ মোল্লা, মালেক মোল্লা, ফয়সাল গাজী সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ক্ষমতার অপব্যবহার করে কৃষি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে ইটভাটা সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন।

বুধবার (১৯ মার্চ) রাতে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে অন্তত ৫ টি স্থানে অবাধে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। এসব মাটি বিভিন্ন ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করে নেয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। তবে সবচেয়ে বেশি মাটি যাচ্ছে উপজেলার ইটভাটাগুলোতে।

উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের সূর্য মনি ও চর হোগলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় মালেক মোল্লা, আমজাদ মোল্লা ও ইউপি সদস্য ময়নাল খান ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কাটাচ্ছেন। এসব মাটি কেটে কয়েকটি ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে মাটি বিক্রি সেই যায়গায় ফসলি জমিটিকে পুকুরে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন। এখানে প্রায় দুইমাস ধরে তারা মাটি বিক্রি করছেন। দুএকবার অভিযানও হয়েছিল তবে তা একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হয় নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে মাটি কাটার বিষয়গুলো একের পর এক স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে এসব মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তাই বন্ধ হচ্ছে না কৃষি জমির উর্বর মাটি কাটা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এতগুলো ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটায় অন্যান্য জমিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কৃষিজমি। এসব মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে স্থানীয় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। তারা এতোটাই বেপরোয়া আমরা কিছু বললেই আমাদের হুমকি ধামকি দেয়। আপনি দেখেন রাস্তাটার কি অবস্থা করছে। এই রাস্তা দিয়ে বর্ষার সময় চলাচল করা সম্ভব না। প্রায় ১০/১২ কি: মিটার রাস্তা একইভাবে শেষ করে ফেলেছে। একজন মেম্বার যদি অবৈধ কাজ করে আমরা তখন কার কাছে যাবো বলেন?।

তবে মাটি উত্তোলনকারী ইউপি সদস্য ময়নাল খান বলেন, ‘আমি মাটি কিনে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করি, মালিক এখানে পুকুর করবে। আর এসব মাটি বসত বাড়িতে নেয়া হচ্ছে। আমি জমি কিনে মাটি কাটছি এখানে কার কী?’ সবাই যেভাবে কাটে আমিও একইভাবে কাটি। প্রশাসন সবকিছুই জানে আপনার নিউজ করার দরকার আপনি করেন। প্রশাসন এখানে আসবে না কখনোই আমাদের যোগাযোগ হয় তাদের সাথে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘এভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার বা কৃষি জমিতে পুকুর করার কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কোনো ব্যক্তি নিজের জমিতেও এই কাজ করতে পারবেন না। আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব অভিযোগ পাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে এসব অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী এবং মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, “যারা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা ফসলি জমি কাটবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।”

 

বার্তাবাজার/এস এইচ