ঢাকার উপকন্ঠে অবস্থিত সাভার উপজেলা। রাজধানীর সন্নিকটে হলেও সাভারবাসী এই ২০২৫ সালে এসেও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার আতঙ্কে দিন কাটায়। সাভারের নদী, খাল ও বিলগুলো দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় হওয়াই এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। অথচ এবার ষয়ে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় নাই সাভার উপজেলা প্রশাসনের।

২৮২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে সাভার উপজেলা বংশী, ধলেশ্বরী আর তুরাগ নদী দ্বারা বেষ্টিত। এই ছোট্ট এলাকার ‘টোপোগ্রাফি’ (Topography) বলে দেয় রাজধানীর প্রবেশ মুখ সাভার নামের এই জনপদ কতটা সমৃদ্ধ ছিলো। তিন দিকেই প্রবাহিত নদীগুলোর সাথে অসংখ্য খাল, বিল, সমতল জমির পাশাপাশি বন্যামুক্ত এলাকাও কম নয়। এক সময়ে খাদ্যে উদ্বৃত্ত, ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসিদ্ধ সাভার এখন অপরিকল্পিত ভাবে শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং অবৈধ দখলদারিত্বে প্রায় বসবাসের অযোগ্য একটি জনপদে পরিণত হয়েছে। সাভার ও আশুলিয়ার বিখ্যাত সেই খালগুলো প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলদারিত্বে এখন মৃতপ্রায়। এক সময়ের স্রোতস্বিনী খালগুলো এখন তাদের প্রবাহ হারিয়ে পরিণত হয়েছে সরু নালায়।

মূলত দুইভাবে সাভার ও আশুলিয়ার খালগুলো মরে যাচ্ছে। প্রথমত: অবৈধ দখলদারদের জন্য এবং দ্বিতীয়ত কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলে দেয়ায়। সাভার উপজেলার তিনটি অঞ্চল এই দখল এবং দূষণে খুবই প্রকট আকার ধারণ করে আছে। এগুলো হলো দক্ষিণ পাথালিয়া- উত্তর সাভার নিম্ন অঞ্চল, কর্ণপাড়া খাল- বিল বাঘিল সংলগ্ন নিচু অঞ্চল এবং ইপিজেড- ধলাই বিল অঞ্চল।

পাথালিয়া ইউনিয়নের নয়ারহাট এলাকা থেকে শুরু করে দক্ষিণে সাভারের উত্তর পর্যন্ত উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমি ঘিরে প্রবাহমান খাল ও বিলগুলোর পানি দূষিত এবং ব্যবহারের অযোগ্য। নয়ারহাট বাজারের পাশে বিশ্বাস গ্রুপ, এইচআরসি (HRC), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কোহিনুর টেক্সটাইল সহ অসংখ্য শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য অবৈধ দখলদারীর পরেও খাল-বিল গুলোর যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে সেখানে পতিত হয়ে ভয়াবহ দূষণের সৃষ্টি করছে। এসব খাল ও বিলের মধ্যে রয়েছে- পাকুরিয়া বিল, তাতী বিল, শুকনা বিল, রইপতা বিল, নোয়াদ্দা খাল, রক্তারপুর খাল ইত্যাদি। এই অঞ্চলের সাথে সংযুক্তকারী উৎসমুখ এবং নয়ারহাট বাজারের উজানে বিখ্যাত যোগী-জাঙ্গাল (জুগী জঙ্গল) খাল বন্ধ করে রাতারাতি বড় ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই। সভ্যখালি নামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাল বন্ধ করে ইতোমধ্যে তৈরী হয়েছে বাড়ী ঘর। মোটকথা যোগী-জাঙ্গাল ও সভ্যখালি খাল বন্ধ করায় এই অঞ্চলটা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।

নয়ারহাট এলাকায় প্রবাহমান যোগী-জাঙ্গাল ও পাকুরিয়া বিলে বালু ফেলে বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠান ভরাট করে ফেলেছে। ফলে সেখানে পানির স্বাভাবিক প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্যাসহ স্থায়ী জলবদ্ধতার কবলে পড়ছে ওই এলাকার মানুষ। এব্যাপারে সাভার উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারের কাছে এই যোগী-জাঙ্গাল খালের নক্সায় বর্তমানে এর অবস্থানসহ এসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি জানতে চাইলে তিনি নয়ারহাট ভূমি কার্যালয়ের সহকারী ভূমি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী নয়ারহাট ভূমি অফিসে গিয়ে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এর সাথে কথা হয়। এসময় তিনি ধনিয়া মৌজার আর এস এর নকশা এনে দেখান যে, নকশায় এই যোগী-জাঙ্গাল খালের কোনো অস্তিত্বই নেই! নক্সায় বর্তমানে জলাশয় দেখানো আছে ৬৪ নাম্বার দাগে, সেটা বংশী নদী।

তাহলে একসময়ের খরস্রোতা সেই যোগী-জাঙ্গাল খাল কোথায় গেলো এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেন নাই নয়ারহাট ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা। তবে ওই এলাকায় বসবাসরত আব্দুল হামিদ নামের এক সিনিয়র সিটিজেন জানান, তারা ছেলেবেলায় প্রচন্ড খরস্রোতা যোগী-জাঙ্গাল খালে গোসল করতেও ভয় পেতেন। তীব্র স্রোতে তলিয়ে যাবার আশংকা থাকতো। মূলত এই খাল ছিল ‘লো ল্যান্ড’ এবং পাকিস্থান আমলে পানি নিষ্কাশনের জন্যই বংশী নদী থেকে এর উৎপত্তি। তবে এই খালের প্রবাহের বেশীরভাগ জায়গাই ছিলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। কালক্রমে খালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়, আরও পরে কিছু দখল হয় এবং এভাবেই যোগী-জাঙ্গাল খাল বলতে এখন আর কিছুই নেই। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট কোহিনুর স্পিনিং মিলের সামনে স্টারলিং গ্রুপের কারখানার পাশে বর্তমানে ওই খাল নালায় রুপ নিয়ে নিজের করুন অস্তিত্ব জাহির করছে।

এমনটি শুনে অবাক হবার কিছু নেই। যে হারে সাভার ও আশুলিয়ার নদী, খাল ও বিল দখলের মহা উৎসব শুরু হয়েছে এবং ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু দায়িত্বরতদের যোগসাজশে সেগুলো ব্যক্তির নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়া হচ্ছে, তাতে এমন একদিন আসবে যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানবে সাভার উপজেলায় কখনোই কোনো নদী, খাল কিংবা বিল এর কোনো অস্তিত্বই ছিলো না।

আবার, ধলেশ্বরী নদীর বাম দিকের পাড় কর্ণপাড়া খালের উৎসমুখ। প্রাচীন এই খালটির বিভিন্ন অংশের পাড় প্রভাবশালীরা দখল করে নেয়ায় এটাও প্রায় মরে গেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই খালের মাঝে একটি দ্বিতল ভবন দখলদারিত্বের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এদিকে বিখ্যাত বিল বাঘিলের বিল আর নেই। বর্তমানে সেটা খাল হয়ে কর্ণপাড়া খালের সাথে মিলিত হয়ে তুরাগ নদীর সাথে মিলেছে। ভূমি দস্যুরা বিল বাখিলের বেশীরভাগই নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। কর্ণপাড়া খালের বাম পাশে উলাইল এলাকা অঘোষিত শিল্পাঞ্চল ঘোষিত হওয়ায় এটা বর্তমানে এক ভয়ংকর এলাকা হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে। এই শিল্প এলাকার সকল বর্জ্যই কর্ণপাড়া খালে পড়ছে বিনা বাধায় অথচ দেখার কেউ নেই। আবার, কর্ণপাড়া খালের মাঝখানে একটি দ্বিতল ভবন নির্মিত হয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বহাল তবিয়তে থেকে ব্যঙ্গ করে চলেছে। এই খালের উভয় পাশের দখলদাররা প্রতিযোগিতা নিয়ে দখলের অনুশীলনে ব্যস্ত রয়েছে এমনটাই দেখা যাবে খাল ধরে বেশ কিছুদূর এগিয়ে গেলেই।

এদিকে, ইপিজেড-ধলাই বিল অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমি গত ২০ বছর যাবত ফসলহীন হয়ে আছে এবং বিশেষজ্ঞদের অভিমত যে হারে ইপিজেড এর সকল বর্জ্য ধলাই বিল হয়ে বংশী নদীতে মিশে নয়ারহাটের উজান থেকে সাভারের ভাটিতে কর্ণতলী খাল পর্যন্ত নদীর পানি দূষিত করছে, তাতে আগামী ২০-২৫ বছরও এই অঞ্চলের জমিতে ফসল না হবার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া এই দূষণের মাত্রা এত তীব্র যে এই এলাকার অনেক মানুষ তাদের আবাসস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে অথবা সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

অপরদিকে, সাভারের আশুলিয়ার ৫ শতাধিক শিল্প ও কারখানার বর্জ্য এবং আবাসিক এলাকার বর্জ্যে নয়নজুলি খালটি এখন ছোট নর্দমায় পরিণত হয়েছে। একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক অবৈধভাবে এ খালটির দুই পাশ ভরাট করে তাদের শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছে। ফলে একসময়ের ৪০ ফুট প্রশস্ত খালটি এখন মাত্র ৪ ফুটের এক নর্দমায় পরিণত হয়েছে!

সরেজমিন দেখা গেছে, ইয়ারপুর ইউনিয়নের জিরাবো পুকুরপাড়া এলাকার লুসাকা গ্রুপ খালের মধ্যে সরু পাইপ দিয়ে তার উপর দিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছে। এছাড়া শ্রীখন্ডিয়া গ্রামের আমান স্পিনিং মিল নামক কারখানার কিছু অংশ এই খাল ভরাট করে নির্মান করেছে। ফলে খালের পানি প্রবাহ থেমে গেছে এবং এই কারনেই এখানে সারাবছরই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। অপরদিকে, নয়ন জুলি খাল দখল ও বন্ধ করে ঐ জমির উপর অনুমতিবিহীন ভাবে আবাসিক এলাকায় কারখানা তৈরি হওয়ায় দূর্ভোগে পড়ছে ওখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা।

এব্যাপারে সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা জানান, সাভারের অনেক শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদী, খাল, বিলে ফেলা বন্ধ তো হয়নি বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ট্যানারির সিইপিটি এবং বলিয়ারপুরে ডাম্পিং স্টেশন এখনও পর্যন্ত কার্যকরী হয়নি। অনেক শিল্পকারখানায় ইটিপি থাকলেও ব্যবহার করা হয়না। সাভার পৌরসভা এবং অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তাদের সকল বর্জ্য মহাসড়কের উভয় পাশে ডাম্পিং করে যাচ্ছে। এসব কিছু মিলিয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সাভার।

দখলের কবলে পড়ে সাভারের নদ-নদী ও খাল-বিলগুলি প্রবাহ শূণ্য হয়ে পড়ছে এবিষয়ে তিনি বলেন, প্রায় সময়ই উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব জলাশয় দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়, কিন্তু সেগুলি দখলমুক্ত করতে তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়না, হয় না তেমন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন। ফলে নতুন নতুন ভূমি দস্যুরা আবারো নব উদ্যমে নদী ও খালের অংশ দখল করায় মেতে উঠে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাভারে দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর মধ্যে মাত্র ১৪টি খাল ও ১টি বিল খনন করলেই এই জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রায় ৮০ শতাংশ সমাধান হতে পারে। সাভার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীরনগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির গা ঘেঁষে দিয়া বাড়ি খাল এসে শেষ হয়েছে। অবৈধ দখলদারেরা বালু ফেলে এই খালটিকে দখল করে নিয়েছে। বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেও কোন প্রকারের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন। এই খালের আশেপাশে প্রায় তিন লক্ষ লোকের বসবাস।

বিগত সরকারের আমলে অনেক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ড্রেন লাইন; কিন্তু দুঃখের বিষয় নির্মাণ করা ড্রেনের ময়লা পানি সরাসরি খালে না পড়ে এলাকার ভিতরেই ঘুরতে থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই পানি রাস্তায় উঠে যায়।তাই এসব খাল খনন করতে পারলে বৃষ্টির দিনে এই জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচতে পারবে সাভারবাসী।

সাভার উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও জলাশয়। যার মধ্যে জামুরমুচিপাড়া মৌজায় তেঁতুলঝোড়া খাল, কান্দিবলিয়ারপুর, চান্দুলিয়া মৌজায় বামনী খাল; পাথালিয়া মৌজায় যোগী-জাঙ্গাল (জুগী জঙ্গল), নয়নজুলী খাল, চারিগাঁও ও চাকরগাঁও মৌজায় তাঁতি বিল (শুকনা বিল) ও বড়ওয়ালিয়া ও মোহনপুর মৌজায় রইপতা (নোয়াদ্দা) উল্লেখযোগ্য। এ খাল ও বিলগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক গ্রামবাসীর জীবন ও জীবিকা। একসময় কৃষিনির্ভর সাভারবাসী সেচের জন্য অনেকাংশেই এসব খাল ও বিলের পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। অবৈধ খদলদারিত্ব ও দূষণে জনগুরুত্বপূর্ণ এসব খাল, বিল ও জলাশয়গুলো বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব খাল ও বিলের অংশবিশেষ ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি শিল্প মালিকরা তাদের শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবেও ব্যবহার করছে উল্লেখিত খাল ও বিলসমূহকে।

অপরদিকে, এক কালের সাভারের বন্দর নামে পরিচিত নদীর কুল ঘেঁষে অবস্থিত সাভারের নামা বাজার আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, আর ক্ষুদ্র হচ্ছে বংশী নদী। কেননা বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নদীর জমি দখল করে সেখানে নির্মাণ করছে দোকানপাট, মালামাল রাখার গুদামঘর, চিড়া ও তেলের মিল, ডাল মিলসহ অন্যান্য কলকারখানা। বিগত সরকারের আমলে সাভারে বংশী নদীর উপর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও কিছুদিন পরেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজসে পুনরায় আবার লিজ দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । আবারও দখল হয়ে গেছে বংশী নদীর নামা বাজার অংশ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সাভারের নয়ারহাট থেকে শহীদ রফিক সেতু পর্যন্ত বংশী নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নামাবাজার এলাকায় নদীর তীর দখল করে কয়েক হাজার পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। পানিতে ইট, খোয়া আর বালু ফেলে ডাল ভাঙানোর কারখানা গড়ে তুলেছে। সাভার থানা সংলগ্ন নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে প্রায় পাঁচ একর সরকারি জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা আবাসন এলাকা। এ ছাড়া পাঁচ শতাধিক শিল্পকারখানা থেকে বিরামহীনভাবে নির্গত বর্জ্য বিষিয়ে তুলেছে পরিবেশ। এতে অধিকাংশ নদী ও খাল-বিলে পানির বদলে মিলছে বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য। প্রতিনিয়ত পানিবাহিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখের সামনেই এভাবে নদী খাল দখল হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। ফলে প্রভাবশালীদের নদী ও জলাশয় দখল চলছেই। হাউজিং ব্যবসার প্রতারণার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। বংশী, তুরাগ ও ধলেশ্বরীর শাখা নদী ও একাধিক খালের তীর দখলের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রেখেছে ভূমিদস্যুরা। এলাকার বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও হাউজিং কোম্পানিগুলো প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তুরাগ, বংশী, ধলেশ্বরী নদী দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ করলেও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এ দখল প্রক্রিয়া।

একটি সূত্র জানায়, সরকারি সম্পত্তি দখলে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ভূমি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। অনেক সরকারি সম্পত্তির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অফিসের সহায়তায় দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নিজেদের দখলে নিয়েছেন। সাভার বাজারের পাশে বংশী নদীর পাড় ঘেঁষে সরকারি জমি (খাস জমি) নামে-বেনামে এবং লিজের মাধ্যমে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সিংহভাগ জমিই বেহাত হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে অজ্ঞাত কারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বর্তমানে বংশী নদীর তীর ঘেঁষে এ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

এব্যাপারে, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু বকর সরকার জানান, এব্যাপারে আমাদের বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ‘সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন’ তৈরীর জন্য জমি সংগ্রহ করার কাজ চলমান। যে সমস্ত জায়গায় দখলের পরিমাণ বেশী, সেখানে দখলগুলো উচ্ছেদ করে সেখান থেকে নদী-খাল-বিল দখলমুক্ত করে সেগুলো খননের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যে যে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধির এলাকার মধ্যে এগুলো পড়বে, তারাই এটা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবেন।

 

বার্তাবাজার/এস এইচ