একদিকে পাহাড় অন্যদিকে বালিয়াড়ি দেখতে পৃথিবীর সেরা সুন্দর জায়গারটির নাম মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সেই সড়কের পাশে হিমছড়ি প্যাচারদ্বীপ এলাকায় বিশাল সৈকত বালিয়াড়ি এলাকা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট। সম্প্রতি বালিয়াড়ি দখলমুক্ত অভিযান পরিচালনা চলমান থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই মারমেইড বিট রিসোর্টে অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা পরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অভিযানের পর কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ মারমেইড বিচ রিসোর্টের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। বনবিভাগ মামলা করার কারণে স্থানীয় হিমছড়ি বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শোভনকে বিভিন্ন মাধ্যমে হয়রানি করার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ সৈকতের বালুচরের উপর নির্মিত অন্তত ৫ একর এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল সম্প্রতি। দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হলেও আবারো সেই স্থাপনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বালিয়াড়িতে স্থাপনা গড়ে সেখানে করা হয়েছে ফুল মুন পার্টি।

রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, সম্প্রতি একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, তবে আবারো স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে কিনা তা জানা নেই। এদিকে গত ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ২০ একর জমি জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলেও তৎকালীন সময়ের কিছু এমপি-মন্ত্রীদের দাপট দেখিয়ে আবারো সেই জমি দখলে নিয়ে তৈরি করেছে মারমেইড রেস্তোরাঁ। এখন প্রায় অর্ধশত একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্টটি।

এদিকে রিসোর্টের এলাকা বাড়াতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসড়কে দরিয়ানগর সৈকতের প্ররিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক খাল ভরাট করে রেস্তোরাঁ তৈরির চেষ্টা চলছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। রিসোর্টটির মালিক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। অভিযোগ উঠেছে, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইসিটিমন্ত্রী পলকসহ একাধিক মন্ত্রী-প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে সম্পর্কের বলয় দেখিয়ে একের পর এক সমুদ্রের বালিয়াড়ি দখল করেছেন সোহাগ।

নিজেকে শেখ পরিবারের একজন দাবি করা সোহাগ দখলবাজি চালিয়ে গেলেও অজানা কারণে গত ১৫ বছর প্রশাসনের কেউ সেদিকে নজর দেননি। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বহমান খালের উপর অবৈধ একটি সেতু নির্মাণ করেছেন। যে সেতুর উপর দিয়ে যেতে হবে সেই বিশেষ ডিজে ও মদের জোনে। তবে সেতুর কারণে খালে নৌকা চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রিসোর্টের মালিক সোহাগ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম দিয়ে বেশ বিশাল বালিয়াড়ি দখল করে সমুদ্র সৈকতে গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। এই বালিয়াড়ি যেন তার নিজস্ব সম্পদ এমনভাবে ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। নামমাত্র কিছু জায়গা মারমেইড বিচ রিসোর্টের নামে থাকলেও তার বেশ কয়েকগুণ অবৈধ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সরকার যেমন হারিয়েছে জমি তেমনি পরিবেশ প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে বলে জানায় সমাজের সচেতন নাগরিকরা।

প্রবেশের পথে বাধা দেওয়া মারমেইড রিসোর্টের কর্মী জানান, বিশেষ অনুমতি ছাড়া এই সেতুতে প্রবেশ নিষেধ। কর্তৃপক্ষের বিশেষ টোকেন ছাড়া এখানে কাউকে ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে। পরে রেস্টুরেন্টের কর্মী সালাম এসে দাবি করেন, নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় রাতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। পরে তাকে ম্যানেজ করে সেখানে প্রবেশের অনুমতি মেলে প্রতিবেদকের। ভেতরে প্রবেশের পর দেখা মেলে আরেক কর্মী ওসমান গণির। প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণ জানতে চাইলে ওসমান বলেন, ‘এখানে শুধু রুমে যারা আছেন, তারা আসতে পারবেন। আর প্রতি মাসে একটি বিশেষ ‘ডিজে পার্টি’ হয়। জনপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা ফি নেওয়া হয়। শুধু তারাই এখানে আসার অনুমতি পান। বিশেষ ডিজে পার্টিতে কী কী থাকে বা কী খাবার থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তেমন কিছু না, শুধু বিদেশি বিয়ার বা মদ, আর নাচ-গান থাকে। তবে ঝাউবীথি কেটে কেনো এমন স্থাপনা তৈরি করার বিষয়ে কেউ কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন হিমছড়ি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘রাতের আঁধারে ঝাউবীথি কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু গভীর রাতে কাটায় আমরা তাদের ধরতে পারছি না। সম্প্রতি একটি মামলাও করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘সরকারি জমি হোক আর ব্যক্তিগত জমি হোক, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ নেই। খাস বা সৈকতের বালিয়াড়িরর জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

 

বার্তাবাজার/এস এইচ