নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এর একাডেমিক ভবন ৩ এর অবশিষ্ট অংশ নির্মাণ প্রকল্পসহ ৩৪২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি নোবিপ্রবির অসম্পূর্ণ একাডেমিক ভবন ৩ এর অবশিষ্ট কাজ, নোবিপ্রবি স্কুল ও কলেজ ভবন তৈরি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার যন্ত্রপাতি ক্রয়, ২ টি আবাসিক হল নির্মাণ প্রকল্প বাবত ৩৪২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একনেক সভায় পাশ করা হয়। প্রকল্পের বাজেট পাশ হওয়ার সংবাদে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের দাবী উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় গ্রুপে এ বিষয়ে মতামত জানিয়ে শিক্ষার্থীরা পোস্ট করে।
২০১৮ সালের এপ্রিলে নোবিপ্রবির ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে জি কে শামীমের সুপারিশে কাজটি নেয় জি কে স্বপনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য শুরুতে ৩০ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু নিদিষ্ট সময় পার হলেও তিন তলা পর্যন্ত আংশিকভাবে কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলে প্রকল্প থেকে জি কে স্বপনের প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। ফলশ্রতিতে দীর্ঘ মেয়াদিভাবে একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণকাজ আটকে যায়। পরবর্তীতে নোবিপ্রবি প্রশাসন আংশিকভাবে সংস্কার করে বিভিন্ন বিভাগকে ক্লাসরুম বরাদ্দ করে।
নোবিপ্রবির ৩৪২ কোটি টাকার নির্মাণকাজের প্রকল্প সেনাবাহিনীকে প্রদান করার বিষয়ে নোবিপ্রবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম হাসান বলেন,, ” নোবিপ্রবিতে ক্লাসরুম সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। অতীতে একাডেমিক বিল্ডিং-০৩ এর কাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে দেওয়া হলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ক্ষমতার পালাবদলে কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং আমরা নিম্নমানের কাজ লক্ষ্য করেছি। এমতাবস্থায় একাডেমিক-০৩ এর কাজ স্বচ্ছতার সাথে অতিদ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক বিল্ডিং-০৩ এর কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছি।
এসময়ে তিনি আরো বলেন, ” আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করালে অতিদ্রুততার সময়ে কাজ শেষ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটগুলো নিরসন করা সম্ভব। তথাকথিত ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতে চাইলে আমরা নোবিপ্রবিয়ান’রা মেনে নিবো না। প্রয়োজনে আন্দোলন করে হলেও আমরা আমাদের দাবি আদায় করে নিবো।
নোবিপ্রবি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ফারিহা বলেন, ” আমরা ২০১৯-২০ সেশন যখন ক্যাম্পাসে আসি তখন থেকেই একাডেমি ভবন-৩ এর কাজ শুরু হয়। ভাবতাম খুব শীগ্রই হয়তোবা এই ভবনের কোন একটা ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করা হবে কিন্তু আপসোসর ব্যাপার এই যে, আমাদের এখন অনার্স শেষের পথে কিন্তু একাডেমি ভবন-৩ এর অবস্থার পরিবর্তন হয় নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, অবহেলা এবং দূর্নীতির চরম চিত্র দেখতে পাই আমরা। নোবিপ্রবিতে ক্লাসরুমের তীব্র সংকট কারোই অজানা নয়। দীর্ঘদিন ধরে এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে হতাশার মধ্যেও আশার কথা হলো নতুন করে আবারো একাডেমি ভবন -৩ এর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু পূবের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমি চাই না কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভবনের কাজ সম্পূর্ণ হোক। বরং সেনাবাহিনীর আওতায় হলে কাজটি সুষ্ঠ, দ্রুতগতিতে এবং সততার সাথে হবে বলে আশাবাদী। তাই নোবিপ্রবির একজন শিক্ষার্থী হিসেবে চাই একাডেমি ভবন -৩ এর কাজ সেনাবাহিনীত আওতায় হোক। ”
নোবিপ্রবির এমআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ” নোবিপ্রবি গলার কাটা হিসেবে গন্য একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে কয়েক বছর ধরে। পতিত স্বৈরাচারের কিছু দোসর এর ঠিকাদার হিসেবে ছিলো এবং এবং তারা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে নোবিপ্রবির অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। বিগত সৈরাচারের সহযোগী প্রশাসন ও এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে নি। বর্তমান প্রশাসনের একাডেমিক ভবন ৩ এ নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া নোবিপ্রবির অগ্রগতির বড চিহ্ন।নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রানের দাবি এই একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণ কাজ কোন ঠিকাদারকে না দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে পরিচালনা করলে সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্নের আশা করা যায়। আশাকরি নোবিপ্রবি প্রশাসন একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে দিনো শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন হিসেবে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে।”
নোবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্প সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে দেওয়ার বিষয়ে নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ” আমরা এখনো সরকারের পক্ষ থেকে অর্থছাড়ের সবুজ সংকেত পেলে নতুন করে প্রকল্পের জন্য দরপত্রের আহ্বান করবো। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যদি সেনাবাহিনীকে প্রকল্পের দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয় সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়, তবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো। আমরাও চাই নোবিপ্রবির এ উন্নয়ন প্রকল্প স্বচ্ছতার সাথে এবং সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হোক।
বার্তাবাজার/এস এইচ