সাভার হাইওয়ে থানা (গাজীপুর রিজিয়ন) ঘেরাও করেছে মহাসড়কে চলাচলরত থ্রি-হুইলার চালকগণ। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাতীয় যুব উন্নয়ন সংলগ্ন সাভার হাইওয়ে থানার সামনে এসে বিক্ষোভ করে তারা থানা ঘেরাও করে রাখে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক পঞ্চাশটি অটোরিকশা সাভার হাইওয়ে থানার সামনে মহাসড়কে রাখা। আর চালকেরা থানার গেটের সামনে বিক্ষোভরত। এসময় হ্যান্ড মাইকে কথা বলছিলেন ঢাকা জেলা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সংগ্রাম পরিষদের সহ-সভাপতি ও বাসদ সাভার উপজেলার আহবায়ক শেখ মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক। তার পাশে ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জীবন।
গণমাধ্যমকে শেখ মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমাদের দাবি ছিল সাভারের আমিনবাজার থেকে নবীনগর পর্যন্ত অটোরিকশা চলাচলের ক্ষেত্রে একটি বাইলেইন তৈরি করার। এবিষয়ে সাভারের ইউএনওকে আমরা স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ উপদেষ্টা যেহেতু এর সাথে জড়িত, তাই হাইওয়ে থানার মাধ্যমে উপ-কমিশনার, কমিশনার হয়ে সড়ক ও জনপথ উপদেষ্টার কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা ছিল। এইজন্য ওই দুইজায়গায় স্মারকলিপি দিতে আজ আমরা জমায়েত হয়েছিলাম যে আগামী মঙ্গলবার এই স্মারকলিপি আমরা প্রদান করবো। এইটা হাইওয়ে পুলিশ জানতে পেরে সাথে সাথে আটটা অটোরিকশা ধরে নিয়ে আসে। পরে আমাদের চালকেরা যে যার মতো দুই হাজার, তিন হাজার, পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তাদের অটোরিকশা ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
এসময় এই প্রতিবেদক জানতে চান কারা ওই পরিমান টাকা দিয়ে অটোরিকশা ছাড়িয়ে এনেছেন। তখন দুইজন চালক সামনে এসে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। তাদের একজন মো: আলমগীর জানান, তিনি ইবনে সিনা থেকে রোগী নিয়ে মহাসড়ক ধরে আসছিলেন। তখন হাইওয়ে থানা তার রিকশা ধরে নিয়ে গেলে তিনি ২৬০০ টাকা বিকাশে র্যাকার বিল দিয়ে তার অটোরিকশা ছাড়িয়ে নেন। মো: মারুফ নামের আরেক অটো চালক জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশমাইল এলাকায় যাত্রীদের কেবল ওভারব্রিজ এর একপাশ থেকে অপরপাশে নামিয়ে দেন কারণ তারা বয়স্ক ছিলেন বিধায় ওভারব্রিজ পার হতে পারছিলেন না। ঠিক তখন তার রিকশা হাইওয়ে থানার পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে ২৬০০ টাকা দিয়ে স্লিপের মাধ্যমে র্যাকার বিল দিয়ে রিকশা ছাড়িয়ে নেন তিনি।
এদের বক্তব্যের মাধ্যমে ঢাকা জেলা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সংগ্রাম পরিষদের সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকের হাইওয়ে থানার পুলিশের প্রতি বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়ে অটোরিকশা ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কারণ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। হাইকোর্টের নির্দেশনায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী মহাসড়কে সিএনজি, লেগুনা, অটোরিকশা, ভটভটি, নছিমন করিমন ও ইজিবাইকসহ থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল দণ্ডনীয় অপরাধ। এসকল যানবাহন মহাসড়কে পেলে মামলা দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে জরিমানা আদায় করার ১৫ দিন পর ছেড়ে দেয়ার বিধান। দীর্ঘদিন ধরে র্যাকার বিলসহ এই জরিমানার অংক ২৬০০ টাকা যা বিকাশের মাধ্যমে কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের রশিদের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে।
অপরদিকে, আহমেদ জীবন নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী যিনি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক, তাকেও হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তিনি কিভাবে এই অটোরিকশা চালকদের এই থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হলেন এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি কিছুটা থতমত খেয়ে যান। তবে তিনি জানান, যেহেতু রিকশা শ্রমিক নিয়ে কাজ করছি এবং এখনো এই কমিটিতে আমাকে আনা হয় নাই, তবে আমি এখানে শ্রমিক ফ্রন্টের দায়িত্ব নিয়েই আসছি।
থানা ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পাথালিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন রানা জানান, সাভার হাইওয়ে থানা তার ওয়ার্ডের ভিতরে পড়েছে বিধায় অটোরিকশা চালকদের এই কর্মসূচি শুনে তিনি এখানে এসেছেন। উত্তেজিত চালকদের বুঝিয়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করেছেন। আর যে আটটি রিকশা ধরে আনা হয়েছে, হাইওয়ে থানার ওসির সাথে কথা বলে তাদের নিয়মানুযায়ী সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও আলাপ করেছেন।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের হস্তক্ষেপে ৩০ মিনিট থানা ঘেরাও করে রাখার পর চালকেরা ফিরে যান। কিন্তু হঠাৎ করে মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার চালকদের সাভার হাইওয়ে থানা ঘেরাও করার বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারছেন না ওয়াকিবহাল মহল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, নিশ্চয় কেউ অটোচালকদের উস্কানি দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত লাভের কারণে থানা ঘেরাও কর্মসূচি চালিয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনাটা জরুরি। তবে সাভার হাইওয়ে থানার ওসি সওগাতুল আলম জানান, কোনোভাবেই মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল করতে দেওয়া হবে না।
বার্তাবাজার/এস এইচ