ঢাকার সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের ভিতর থেকে চুক্তিভিত্তিক এক শ্রমিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম মাহফুজুর রহমান রাজু। বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের ভিতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্বজন ও কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, পানির পাম্পে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক মাহফুজুর রহমান রাজু গতকাল সন্ধ্যায় কাজ শেষে রাতে আর বাসায় ফেরেনি। স্বজনরা তার মোবাইলে একাধিক ফোন করেও কোন যোগাযোগ করতে পারে নাই। পরে আজ (বুধবার) সকালে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের ভিতরের একটি সড়কের পাশে তার গলাকাটা মরদেহ পাওয়া যায়।
এসময় ডেইরি ফার্ম কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। এব্যাপারে গণমাধ্যমকে নিহতের শ্যালক জানান, তার দুলাভাইয়ের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট এলাকায় চা এর দোকান ছিলো। এই দোকান নিয়ে একটা গন্ডগোল চলছিলো। হতে পারে একে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গন্ডগোলে তিনি নিহত হয়েছেন।
আশুলিয়া থানার ওসি মো: নুরে আলম সিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানান, নিহত ব্যক্তি ডেইরি ফার্মে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কাজ করতেন। ডেইরির ভিতরে বিশাল জায়গা। এর একপ্রান্তে একটি পাম্প রয়েছে। সেখানেও সে কাজ করেছে গতকাল সন্ধ্যায়। আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার দিকে সে কাজ করে ফেরার সময় কে বা কারা তার গলার ডান দিকে ছুরি দিয়ে স্ট্যাব করে ফেলে রেখে যায়।পরে সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করি এবং মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠাই। আমাদের তদন্ত চলছে, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এর পরিচালক মো: মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত ব্যক্তি তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাণিপুষ্টি প্রকল্পের একজন অনিয়মিত শ্রমিক। এই মাসের পাঁচ তারিখে তিনি দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজে যোগ দিয়েছেন। গতকাল ওনাকে পানির পাইপলাইনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তিনি দুইটা থেকে দায়িত্বরত ছিলেন।পানির পাম্প বন্ধ হয় সন্ধ্যা সাতটায়। কাজ সেরে ওনার সাথে কর্মরত আরো কয়েকজন যারা ছিলেন, তারা আগে চলে যায়। তিনি একা নির্জন রাস্তা দিয়ে আসার সময় কে বা কারা তাকে আক্রমণ করে এবং তিনি নিহত হন। আজ সকাল সাতটা কুড়ি মিনিটে আমি খবর পেয়ে পুলিশকে জানাই। তারা এসে তাদের কার্যক্রম চালায়।
ডেইরি ফার্ম প্রতিষ্ঠানের ভিতরে একজন স্টাফকে এমন নৃশংস ভাবে হত্যা করায় ভিতরে বসবাসরত অন্য স্টাফদের নিরাপত্তা কোথায়? বার্তাবাজার প্রতিনিধির এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, এই বিশাল জায়গার প্রতিষ্ঠানে মাত্র বাইশ জন আনসার রয়েছে যাদের ভিতর এগারো জন ছুটিতে আছে। এই অল্প পরিমাণ নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে আসলেই নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব না। মাদকের এক বিশাল চক্র মাদক বিক্রির ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার কে ব্যবহার করা হয় এমন প্রশ্নে মনিরুল ইসলাম জানান, যেহেতু এটা একটা বিশাল এলাকা, তাই আমাদের পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। প্রাচীরগুলো খুব পুরনো এবং মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উচু। এটা টপকে যে কেউ আসতে পারে।
নিহতের পরিবারকে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, যেহেতু বিষয়টা মানবিক এবং নিহত মাহফুজুর রহমান রাজু কোনো সরকারি কর্মচারী ছিলেন না। এক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তার পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করবো এবং আইনী সহযোগিতা ও থাকবে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ।
বার্তাবাজার/এসএইচ