ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কাঁচাবাজার আড়তের পাশে গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ পলিথিনের বাজার। এর ঠিক পাঁচ মিনিট দূরত্বে রয়েছে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর কার্যালয়।
অপরদিকে, সুপারশপের পর গত ১লা নভেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে কাঁচা বাজারেও পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সরেজমিন আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কাঁচাবাজার আড়ত সংলগ্ন পলিথিনের ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য দোকানে প্রকাশ্যে থরে থরে সাজানো রয়েছে বাহারি রঙ এর নিষিদ্ধ পলিথিন। এসব দোকানে মূলত পাইকারি বিক্রি করলেও যে কেউ এসে খুচরা হিসেবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এখান থেকে কিনে নিয়ে যেতে পারে। সরকারের এই পলিথিন নিষিদ্ধকরণ বিষয়টি বাইপাইলের এই বাজারে এসে প্রকাশ্যে তাদের বিপণন দেখলে যে কেউ ভিরমি খাবে। পলিথিন নিষিদ্ধকরণ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই বাজারে চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছে পলিথিন বিক্রেতারা।
এদিকে, এই বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নলীর খাল। সরেজমিন এই খালের পাশে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচাবাজার এবং মাছের আড়ত এর সকল ব্যবহৃত পলিথিন ফেলা হয় এই খালে। ফলে পানি দূষিত হবার পাশাপাশি সকল পলিথিন জড়ো হয়ে রুদ্ধ করে ফেলছে এর প্রবাহ। তাতে করে বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের অতিরিক্ত পানি বের হবার একমাত্র খালটি সংকীর্ণ হওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে আশুলিয়ার এই অঞ্চল। আর জলাবদ্ধতা না কমায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে বাধ্য হচ্ছে এই এলাকার জনগণ।
বিষয়টি জানতে চেয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু বকর সরকার এর মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় পলিথিনের বাজার বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। তবে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম নিষিদ্ধ পলিথিনের বাজার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর হোয়াটস অ্যাপে বাইপাইলের এই পলিথিনের বাজারের সচিত্র ডকুমেন্টস প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি এবিষয়ে সেখানে কোনো মন্তব্য করেন নাই।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেছিলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ কার্যক্রমে কাঁচা বাজার ও পলিথিন উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালানো হবে। তবে পরবর্তীতে সাভারে এই কার্যক্রমের ছিটেফোঁটাও পরিলক্ষিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিন এমন একটা পণ্য যা মাটির মধ্যে মেশে না, পানিতেও গলে না। ফলে মাটি ও পানি দূষণের এটা অন্যতম কারণ। এর ব্যাপক ব্যবহার এবং যত্রতত্র তা ফেলার ফলে রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি সর্বত্র আবর্জনা সৃষ্টির একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত। স্যুয়ারেজ লাইন আটকে যাওয়া, জলাবদ্ধতা ইত্যাদির অন্যতম কারণও এ ধরনের পলিথিন।
বার্তাবাজার/এসএইচ