শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কটি দেশের ২১ টি জেলার আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট। এই মহাসড়কে ইদানীং ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় শরীয়তপুর-চাদপুর মহাসড়ক যেন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে ডেঞ্জার জোনে। মহাসড়কে ঘন কুয়াশা, কৃত্রিম যানজটের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা কিংবা দুর্ঘটনার কারণে গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।

গাড়ি থেকে পণ্য চুরি ও ডাকাতির পাশাপাশি চালকদের বিশ্রামের সময় গাড়ির কাগজপত্রও চুরি করা হচ্ছে। গত ১০ দিনে তিনটি ঘটনার দেখে এমনটাই ধারণা করা যেতে পারে যে, মহাসড়ক যেন দখলে নিয়েছে অপরাধীচক্র। অন্যদিকে অনেক সময় মামলা নিতেও গড়িমসি করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তবে ভুক্তভোগীরাও বলছেন, মহাসড়কে হাইওয়ে কিংবা থানা পুলিশের কোনো নজরদারি নেই। ফাঁকা সড়কেও দৃশ্যমান নয় পুলিশি তৎপরতা। বিশেষ করে রাত গভীর হলেই শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। কিন্তু রাতভর যাদের থাকার কথা, সেই পুলিশের কোনো উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, গত ১৭, জানুয়ারী রাতে (ঢাকা মেট্রো-ট ১১-২৯৮৬) চট্টগ্রাম থেকে পন্য সামগ্রী নিয়ে যশোর যাচ্ছিলেন। এসময় ওই ট্রাকটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইকরকান্দি এলাকায় পৌছালে কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা করে। দুষ্কৃতকারীরা চালকের মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে গাড়িটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এসময় চালক চিৎকার চেচামেচি করলে দুষ্কৃতকারীরা চালককে মারধর করে এবং গাড়ির গ্লাস ভেঙে পালিয়ে যায়। এসময় নগদ ৩৪ হাজার টাকা ও মোবাইলফোন নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাক চালক মামুনুর রশীদ ভেদরগঞ্জ থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ একটি চুরির অভিযোগ নিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেয়। এর আগে গত ১২ জানুয়ারী রাতে ভেদরগঞ্জ উপজেলার মোল্লার হাট এলাকায় একইভাবে দুটি পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে চালকের মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। তবে পুলিশের হয়রানির ভয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করতে চান না অনেকেই। সম্প্রতি থানা ও হাইওয়ে পুলিশের নিষিক্রয়তার সুযোগে মহাসড়কে এমন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে পুলিশের এই ইউনিটের তৎপরতা না থাকায় মহাসড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এতে যাত্রী সাধারণ আতঙ্ক নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে।

পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ সদস্যদের নিস্ত্রিুয় ভূমিকার কারণে শরীয়তপুর- চাঁদপুর মহাসড়কে ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়ে গেছে। এরা সুযোগ বুঝে চালককে জিম্মি করে বিভিন্ন পণ্য লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়ছেন আমদানি-রফতানিকারকরা।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা কাভার্ডভ্যান চালক মামুনুর রশীদ বলেন, ওইদিন আমি মালামাল নিয়ে যশোর যাচ্ছিলাম। চাঁদপুর ফেরি পার হয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে গেলে হটাৎ একটি মোটরসাইকেল এসে আমার গাড়ীর সামনে আড়াআড়ি ভাবে রাখে এবং আমাকে থামতে বলে। আমি থামার সঙ্গে, সঙ্গে দুজন আমার গাড়ীতে উঠে আমাকে মারধর শুরু করে। এরপর আমার সাথে থাকা টাকাপয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি ৯৯৯ কল দিলে তারা আমার গাড়ির গ্লাস ভেঙে পালিয়ে যায়। আমি থানায় গিয়ে ডাকাতির অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে আমাকে চুরির অভিযোগ দিতে বলে। পরে আমি নিরুপায় হয়ে চুরির অভিযোগ দিয়ে চলে আসি।

রবিউল নামে এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, কিছুদিন আগে তিনি ফরিদপুর থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। ভেদরগঞ্জ উপজেলার মোল্লার হাট বাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে কয়েকজন মুখোশ পরা লোক গাড়ি থামিয়ে তাঁকে মারধর করে, সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও ফোন নিয়ে যায়। এর পর হয়রানির ভয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করার সাহস পান নি।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার ভেদরগঞ্জ (সার্কেল) মুশফিকুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে তাছাড়া রাতে ডিউটিতে আমাদের টহল পুলিশ থাকে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা রোধে আমাদের পুলিশ কাজ করছে।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ