বরগুনার খাকদোন নদীর দুইপাড়ে ম্যানগ্রোভ বন প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় জনজীবন রক্ষা করে, তবে বর্তমানে বন ঘনত্ব হ্রাস পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। বন রক্ষকদের মধ্যে সন্দেহ হচ্ছে বনবিভাগের কর্মকর্তারা বন নিধনে ভুক্তভোগী হয়ে উঠছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, বনবিভাগের নাকের ডগা থেকে গাছ চুরি হচ্ছে। গণমাধ্যমের উপস্থিতি এড়িয়ে গাছ কাটা হয়; উপস্থিতি মিলে গাছকাটার সরঞ্জাম ফেলে নির্বাসিত হন নিধনকারীরা। বনবিভাগের কর্মকর্তা বা মুঠোফোনে পাওয়া না গেলেও জানা যায়, এই কর্মকর্তারা দিনব্যাপী অফিস ছাড়িয়ে মাঠে কাজ করেন। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ( ধরা) এর সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ বলেন, ‘গাছ কাটা তো দুই এক মিনিটের ব্যাপার না, গাছ কাটতে একটু দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। এদের সাথে অবশ্যই বন বিভাগের যোগসাজশ রয়েছে।’
সচেতন নাগরিক কমিটি, বরগুনা’র সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেছেন, ‘বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। তারা যদি এভাবে দেখেও না দেখার ভান করে তবে তাদের শাস্তি রাতে আনতে হবে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, তালতালীর টেংরাগিরি বনে গাছ কেটে আগুন দেওয়ার নাটক সাজানো হয়। পাথরঘাটায় বনবিভাগকে ম্যানেজ করে অবৈধ জালে মাছ শিকারের কাজে ব্যবহার করা হয় গাছ। এর ফলে উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন হুমকির মুখে।
জেলা পর্যটন উদ্যোক্তা উন্নয়ন কমিটি ও বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, ‘বরগুনার বিভিন্ন জায়গায় ম্যানগ্রোভ বনের গাছ কেটে বিক্রি করে একটি অসাধুচক্র লাভবান হচ্ছে। এই জায়গাতে শুধু বন বিভাগ নয়, আমাদের সকলেই সম্মিলিতভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’ পরিবেশ অধিদপ্তর, বরিশাল’র পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বার্তা বাজার’কে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ম্যানগ্রোভ বন রক্ষা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় নেই।’
এদিকে, অবৈধ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি বনভূমি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বার্তা বাজার’কে জানান, ‘আমরা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সহকারী বন রক্ষককে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি। বিষয় আমাদের অভিযান আরো জোরদার করব এবং যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
উপকূলীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ম্যানগ্রোভ বনের ভূমিকা অপরিসীম। আসন্ন পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচতে সবুজ বনায়নে টেকসই পদক্ষেপের দাবী স্থানীয়দের।
বার্তাবাজার/এসএইচ