ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গত ২ অর্থ বছরের আয় ও ব্যয়ের যথাযথ হিসাব নাই। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদটির ২০২১-২২ অর্থ বছরের নিজস্ব আয়ের টাকাসহ উন্নয়ন তহবিলের ৫০ লাখ টাকা ব্যয়েরও কোন হিসাব নাই। এমন হিসাব না থাকা টাকার মোট পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকারও অধিক।

বার্তাবাজার প্রতিনিধি তথ্য অধিকার আইনে বিরুলিয়া ইউপি সচিবের কাছে গত ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে এই সংক্রান্ত আবেদনের পর প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এই আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়টি পাওয়া যায়। তথ্য প্রাপ্তির পর বার্তাবাজার এর বিশেষ প্রতিনিধি আল মামুন খান এবং অনলাইন পোর্টাল খবর দিনরাত এর বিশেষ প্রতিনিধি আবু বকর সিদ্দিক যৌথভাবে অনুসন্ধানে নামেন। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে এই শুভঙ্করের ফাঁকি সামনে আসে।

জানা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২০২১-২২ অর্থ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অর্থ বছরটিতে পরিষদটির নিজস্ব আয়ের সমাপনী জের টাকা ছিলো ১ লাখ ৫৩ হাজার ১১১ টাকা ও হাতে নগদ টাকা ছিলো ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ টাকা। এছাড়া উন্নয়ন তহবিলের সমাপনী জের ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৮২৭ টাকাসহ মোট টাকার পরিমাণ যথাক্রমে ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৮ টাকা। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই সমুদয় টাকার বিবরণ পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, সমাপনী জের টাকা পরবর্তী বছরের প্রারম্ভিক জের হিসাবে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়।

এই আর্থিক অসঙ্গতির প্রসঙ্গে বিরুলিয়া ইউপি সচিব মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, হিসাবে ভুল হয়ে থাকলে তা অডিট করার সময় সংশোধন করা হবে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিক সমাবেশ করে চেয়ারম্যান হিসেবে বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব গ্রহন করেন মোঃ সেলিম মন্ডল। সেদিন তিনি ইউনিয়ন এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করার কথা বলেছিলেন। তার এরুপ বক্তব্যের ২ বছর পর সাম্প্রতিক সময়ে বিরুলিয়া ইউপি কর্তৃক প্রদেয় তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে, বাস্তবে ইউনিয়নবাসীর তেমন উন্নয়ন না হলেও, পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাবে গড়মিল করে ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যান আর্থিক ভাবে অধিক পরিমাণে লাভবান হয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিরুলিয়া ইউপি’র ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব নাই। উল্লেখিত অর্থ বছর গুলোতে বিরুলিয়া ইউপি কর্তৃক কত টাকা আয় করা হয়েছে এবং এছাড়া আয়কৃত টাকা কি কি খাতে ব্যয় করা হয়েছে- এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পাওয়া না গেলেও, যৌক্তিক ধারণা পাওয়া গেছে। বিরুলিয়া ইউপি কর্তৃক প্রদেয় তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে- ‘বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা’। এই হিসেব মতে, গত ২ অর্থ বছরে আনুমানিক প্রায় ৬০ লাখ টাকা আয় করেছিলো পরিষদটি। যা কাগজে-কলমে উল্লেখ করা হয় নাই।

২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আয়কৃত টাকার হিসাব না থাকা এবং উন্নয়ন ফান্ডের তহবিলের ৪৯ লাখ টাকার ব্যয়ের হিসাব না থাকার বিষয়টি অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বিরুলিয়া ইউপি’র বর্তমান প্রশাসক মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি এই পরিষদে যোগদান করার পরের কার্যাবলী প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে পারি, কিন্তু পুরনো ফাইল সম্পর্কে তথ্য যাচাই ছাড়া তাৎক্ষনিক মন্তব্য করা সম্ভব নয়। এই আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবুবকর সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ব্যস্ত থাকায় এব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

বার্তাবাজার/এস এইচ