বান্দরবানের লামা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জজ রেকর্ডিং অফিসার (জিআরও) মো. আনোয়ার হোসাইনের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বকশিশের নামে বিচার প্রার্থীদের থেকে হাতিয়ে নেয় শত থেকে হাজার দশেক টাকা। এছাড়া মেলে না সেবা। এমনকি নড়েনা মামলার ফাইলও। ফলে বাধ্য হয়ে গুনতে হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। যেনো দেখার কেউ নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা পদে পদে চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন প্রতিনিয়ত। জিআরওর তারিখ বাণিজ্য, মামলার নথি দেখা, হাজিরা দেয়া, ওকালতনামায় সই করা, জামিননামা দেয়া, মামলা লিস্টে আনা, শুনানির সিরিয়াল এগিয়ে আনা, জামিনের শুনানি করা, মামলার নকল তোলাসহ মামলাসংক্রান্ত যেকোনো সেবায় বকশিশ বা খরচাপাতি নামে ঘুষ ছাড়া চলেই না।

এমনকি জিআরোর ঘুষ বাণিজ্যের খপ্পর থেকে রেহাই পাননা বলে জানিয়েছেন স্বয়ং একাধিক আইনজীবীরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী বলেন, আদালতে জিআরওর কারসাজিতেই সবকিছু নড়েচড়ে। টাকা দিলে সবই করতে পারেন জিআরও। আর টাকা না দিলে কিছুই করতে পারেন না। টাকা দিলে এককে দুই আর দুইকে এক করা কোনও ব্যাপারই না। তারা আরো বলেন, জিআরওদের নানা রকম কৌশল রয়েছে। কিভাবে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যায় তা তারা ভালো বুঝেন। ধার্য তারিখ পরিবর্তন সহ বিভিন্ন কৌশলে বিচারকাজে বাধাগ্রস্ত করেন জিআরও।

এদিকে জিআরওর কারসাজিতে ভুক্তভোগী সালমান শাহ নামে একজন বলেন, আমি গাড়ী জিম্মার আবেদন করেছিলাম। এরপর থেকে দেড় থেকে দুই হাজার করে কয়েক ধাপে টাকা নেই আমার কাছ থেকে। পরে পুলিশ তদন্তের রিপোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নেওয়ার নামে আমার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবী করে। আমি কোনরকম ৫ হাজার টাকা দিলেও ৩-৪ মাস পর আমাকে কাজ করে দেয়। একই অভিযোগ এনে ফারুক নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, পুলিশ তদন্তের পর গাড়ী জিম্মার আবেদন গ্রহন করে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়পত্র দেওয়ার পরও টাকার জন্য প্রায় ৩ মাস যাবত রিপোর্ট থানায় ফরওয়ার্ড করেনি জিআরও। পরে ২ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, এক মামলায় অভিযুক্ত নয় এমন আসামির অব্যাহতি চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশ। কিন্তু জিআরও তা ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর অগ্রবর্তী না করে ওই ব্যক্তিকে বারংবার ফোন দিয়ে ডেকে ১০ হাজার টাকা কন্টাক্টের প্রস্তাব দেয়। তিনি আরো বলেন, আমার অসহায়ত্বের সুবাদে একটু কম নেওয়ার কথা বলা মাত্র ১০ হাজার টাকা থেকে ২’শ টাকা কম হলেও ফাইল পেলে রাখবেন বলে জানিয়ে দেয় জিআরও।

এবিষয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল্লাহ কাওছার পিপিএম(বার) বলেন, অভিযোগ গুলো আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান, যাচাই পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। লামা কোর্টের সিএসআই ধীমান বড়ুয়া বলেন, এবিষয়ে আমি এখনো অবগত না, বাকী বিস্তারিত সাক্ষাতে আলাপ হবে।অভিযোগ অস্বীকার করে জিআরও আনোয়ার হোসাইন সাংবাদিককে বলেন, ভাই আপনারাতো আমাদের কাছের লোক। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো সত্য নয়। আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেন।

 

বার্তাবাজার/এস এইচ