জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের পরিচিতিমূলক সভায় ছাত্রদলের দুটি গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক জহির উদ্দিন বাবর সভাটি স্থগিত ঘোষণা করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মী ও পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পরিচিতমূলক সভার আয়োজন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা পৌণে ছয়টার দিকে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা নব-কমিটিতে ছাত্রলীগ ও শিবির পদ পেয়েছে এবং নিজেদের পদের দাবি তুলে স্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে যান। সেখান থেকে বের হয়ে তারা কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গনে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তারা আবার ঘটনাস্থলে ফিরে গিয়ে জহির রায়হান মিলনায়তনের সবগুলো লাইট (আলো) বন্ধ করে দিয়ে সেমিনার কক্ষের বাইরে জড়ো হয়ে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় সেমিনারের ভেতরে থাকা পরিচিতিমূলক সভায় উপস্থিত পদধারী নেতাকর্মীরাও স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেমিনার কক্ষের বাইরে থাকা পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সেমিনার কক্ষের বাইরে থেকে কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙ্গচুর করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ঘটনাস্থলে গিয়ে মিলনায়তনের লাইটগুলো চালু করেন। এবং আজকের সভা স্থগিত ঘোষণা করলে উভয় পক্ষ চলে যান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও পদবঞ্চিত নেতা আব্দুল কাদের মারজুক বলেন, ফ্যাসিস্ট দানব শেখ হাসিনার স্টিমরোলার সহ্য করে গত এক যুগ ধরে আমরা যারা আন্দোলন করেছি তাদেরকে বঞ্চিত করে যে পকেট কমিটি হয়েছে সেই কমিটি মানি না। আমাদের অনেককে বঞ্চিত করা হয়েছে, অথচ পাঁচ আগস্টের পরও অনেকে প্রোগ্রাম করেনি তার নামও এসেছে এই কমিটিতে। এই কমিটি কিভাবে সভাসমাবেশ করতে হয় তাও জানেনা, আমরা এসেছিলাম এগুলো নিয়ে কথা বলতে কিন্তু এই কমিটি এতোটাই অযোগ্য যে তারা এই পরিবেশটাও তৈরি করে দিতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, আমাদের একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিলো যে নতুন কমিটির সবাইকে নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্বের আয়োজন করার। সেই লক্ষ্যে আমরা আজকের প্রোগ্রামটি আয়োজন করেছিলাম, এখানে মূলত যারা নতুন কমিটিতে আছে আমরা তাদেরকেই ইনভাইট করেছিলাম। কিন্তু এখানে এরকম কয়েকজন উপস্থিত ছিলো যাদের আমরা নাম পরিচয় জানি না, আমরা ধারনা করছি গুপ্ত সংগঠনের ইন্ধনে তারা আমাদের প্রোগ্রাম বানচালের চেষ্টা করেছে। এখানে একটা অংশ ছিলো যারা বিরোধী রাজনীতি করেছে, যাদের মধ্যে একটা না পাওয়ার বেদনা ছিলো আমরা সেই বেদনাটা কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আমরা সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে আজকের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের বড় একটি কমিটি হয়েছে, এই কমিটির সবার ডিটেইলস আমাদের কাছে এখনও নাই। আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যদি এই কমিটির কারো সাথে ছাত্রলীগ বা ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে অব্যহতি দিয়ে দেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আসলেই কাম্য নয়। আমরা চাই সবাই সুন্দরভাবে সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করুক। ছাত্রসংগঠনগুলো পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করুক। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েই লাইটের (আলো) ব্যবস্থা করেছি। আশা করব কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করার ব্যাপারে সচেতন থাকবে।
বার্তাবাজার/এস এইচ