হাতিয়া হঠাৎ-ই হাতিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে চুরি ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২-৩ মাস যাবত অব্যাহত চুরি ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে হাতিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বাসিন্দাদের মাঝে। গবাদিপশু, দোকানের মালামাল, অটোরিকশা, মোবাইল, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার সহ কোনোকিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি স্প্রে করে ঘর ডাকাতির ঘটনায় মানুষের জীবন রক্ষা করাও এখন হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমটির সভায় এ সংক্রান্ত বারবর অভিযোগ করা হলেও কোনোভাবেই চোরের উপদ্রব না থামায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

জানা যায়, শুক্রবার (৭ জুলাই) রাতে একসাথে ৪টি চুরি ঘটনা ঘটে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ইউসুপ সোহাগ সন্ধ্যায় বাসার বাইরে চেম্বারে রোগী দেখাকালীন সময়ে হাসপাতালের ভিতরে আবাসিক ভবনের জানালার গ্রীল কেটে তার রুমের আলমারি ভেঙ্গে নগদ সত্তর হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ নিয়ে যায়। তার কিছু সময় পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সামছুদ্দিনের বাসার বেলকুনি দিয়ে ভিতরে ডুকে নগদ এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা লুটে নেয়।একই দিন সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙ্গা বাজারের খন্দকার ফার্মেসীর টিনের চালা কেটে নগদ ত্রিশ হাজার টাকা এবং পাশের তছলিম উদ্দিনের মোবাইল দোকান থেকে একইভাবে নগদ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা ও দশটি মোবাইল সেট সহ সিসিটিভির রিসিভার নিয়ে যায়

এ ছাড়াও স্থানীয় মাইজদি বাজার, আফাজিয়া বাজার, সাগরিয়া বাজার, সেন্টার বাজার, তমরদ্দি বাজার, নিঝুমদ্বীপ, আমতলী বাজার, জাহাজমারা বাজার, খাসেরহাট, পৌরসভার ওছখালি বাজার সহ দ্বীপের প্রায় সকল হাট বাজারের দোকান ঘর এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের বসত ঘর চুরি ডাকাতির ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৮ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাসায় গভীর রাতে চেতনা নাশক স্প্রে করে ঘরের সবাইকে অজ্ঞান করে দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয় ডাকাত দল। অজ্ঞান হওয়া নুরুল ইসলামকে জ্ঞান না আসায় উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

১৫ জুন বৃহস্পতিবার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে গভীর রাতে মাওলানা আবুল খায়ের মাহমুদ হোছাইন ও তার স্ত্রী নামাজের অযু করতে নিজ ঘর থেকে বাহিরে বের হলে গভীর রাতে একদল দুর্বৃত্ত চেতনা নাশক স্প্রে করে। এতে পরিবারের সদস্যরা অজ্ঞান হলে তাদের ঘরের আলমারি ভেঙ্গে নগদ টাকা সহ প্রায় ৭ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ভোরে পরিবারের অন্য সদস্যদের জ্ঞান এলে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তাদেরকে হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি কখন কার ঘর চুরি হয়ে যায়। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোন নতদতারকি নেই বললে চলে। চুরির পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা শেষে আর কোন খোঁজ থাকে না। চুরি যাওয়া মাল কয়েকদিন নিজেরা সন্ধান করে এক সময় থেমে যেতে হয়। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের আর কী বা করার আছে। অতি দ্রুত এই সংঘবদ্ধ চোরদের গ্রেপ্তাতার করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাতিয়ায় বিভিন ইউনিয়নে বসতবাড়সহ দোকান ঘর চুরির ঘটনা ঘটছে।

এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খা বাহিনীর চরম ব্যার্থতা রয়েছে। চোর, ডাকাত, মলমপার্টি সহ সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে হাতিয়ার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমি উর্ধতন কর্তপক্ষের সাথে কথা বলবো, অতিদ্রæত এবিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আমির হোসেন জানান, চুরি এবং ডাকাতির ঘটনায় ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। চোর, ছিনতাইকারী, মলম পার্টি ও ডাকাতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বার্তাবাজার/রাহা