নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিন-রাত চলছে অতিরিক্ত ওজনবাহী ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক, যা একের পর এক সড়ককে ধ্বংস করে ফেলছে। তিস্তা নদীর সিল্ট ট্রাপ থেকে বালু পরিবহনের নামে এসব ট্রাক সড়কে ৩৫-৪০ টন বালু নিয়ে চলাচল করছে, যার কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে মারাত্মক ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে সড়কগুলোর স্থায়ীত্ব হুমকির মুখে পড়েছে, আর জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন, স্থানীয় প্রশাসন এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ নির্বিকার, যা সরকারের সম্পদের বিশাল ক্ষতির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী এবং পরিবহন মালিকদের অবাধ চলাফেরা প্রশাসনের দুর্বল মনোভাবের কারণে সম্ভব হচ্ছে। জনগণের এই বিপর্যয় এবং সরকারের কোটি কোটি টাকার স্থাপনা নষ্ট হলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যার ফলে এলাকার মানুষ এখন শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তিস্তা নদীর সিল্ট ট্রাপের বালুমহাল থেকে প্রতিদিন বালু নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাকগুলো। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫ থেকে ৪০ টন বালু বহন করা হচ্ছে। এসব ভারী যানের চাকার আঘাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা নদীর মুলসাইট ক্যানেলের সড়কসহ ক্ষতিগ্রাস্ত হচ্ছে আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলো।তিস্তা নদীর সিল্ট ট্রাপ বালুমহাল ইজারা নিয়েছে গোলজার রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডালিয়া-পাগলাপীর, ডালিয়া-বুড়িমাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক, ডালিয়া-শুটিবাড়ীসহ আশপাশের গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রান্তে অবাধে চলছে অতিরিক্ত ওজনের ডাম্প ট্রাক। এসব ট্রাক ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ভরাটের কাজে নিয়োজিত। শুটিবাড়ী বাজার এলাকার মো. শাহজাহান খান (৫৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫০) এবং সফিয়ার রহমানসহ অনেকেই জমি ভরাটের জন্য এই ট্রাকগুলো ব্যবহার করছেন। এছাড়াও, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ধান পরিবহনের জন্য ১০ চাকার ট্রাক, ২০ টনের বেশি ভার বহনকারী যানবাহন এবং ১৮ ও ২০ চাকার লরি চলাচল করছে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে সড়কগুলোতে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়ক নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাজার এলাকাগুলোতে ভারী যানবাহনের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টিতে জনজীবনে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

ডালিয়া থেকে ডিমলা সড়কে চলাচলকারী একটি ডাম্প ট্রাকের চালক বাদশা মিয়া জানান, “তার গাড়িতে ৩৭ টন ওজনের বালু রয়েছে। তিনি বলেন, “সড়কে সর্বোচ্চ কত টন ওজনের গাড়ি চলাচল করতে পারবে, তা কোথাও উল্লেখ নেই। এসব বিষয়ে আমাদের লোক (মালিক) আছেন। উনাদের সাথেই কথা বলুন।”

শুটিবাড়ী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রমজান আলী বলেন, “ভারী ট্রাকের কারণে সড়কগুলো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” এ প্রসঙ্গে বাবু বলেন, “আমার আওতায় নয়টি ডাম্প ট্রাক রয়েছে। বর্তমানে এগুলোর মালিক আমি। আমার জন্মের আগ থেকেই এই রাস্তায় দশ চাকার গাড়ি চলতে দেখছি। আপনি পারলে গাড়িগুলো বন্ধ করে দেন।”

এ বিষয়ে বালু মহলের ইজারাদার গোলজার রহমান বলেন, “সরকারি ভাবে ভালো মহল ইজারা নিয়েছি। শুটিবাড়ী, ডিমলা, জলঢাকা রংপুরেও ডাম্প ট্রাকে বালু এখান থেকে বালু নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ভারী গাড়ি চলাচল এই এলাকায় নতুন নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তবে ডাম্প ট্রাক চলাচলে নিষিদ্ধ থাকলে প্রশাসনের পক্ষে জানানোর কথা।” নীলফামারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সওজ) পার্থ সরকার বলেন, “সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ এবং কালভার্টের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। এসব স্থাপনার ক্ষতি এড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।”

নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহসিন বলেন, “বালু মহাল ইজারা দেওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। দেখা-শুনার দায়িত্ব ইউএনওর। যদি ইউএনও কোনো সহযোগিতা চান, আমরা অবশ্যই পুলিশি সহায়তা প্রদান করব। এছাড়া, আমাদেরও দায়িত্ব আছে এবং আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি।”

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, “স্পট নিলাম ডাকের শর্তাবলীর পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বালু বহনের ফলে বাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার ক্ষতিসাধন করা যাবে না।”

 

বার্তাবাজার/এস এইচ