নীলফামারীর ডিমলায় গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের বিরুদ্ধে বার্তাবাজারে ভিডব্লিউবির চাল আত্মসাতের অভিযোগের সংবাদ প্রকাশের পর তিনি দ্রুত নড়েচড়ে বসেছেন।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) চেয়ারম্যান তার লোকজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাভোগীদের মধ্যে চাল এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১,২০০ টাকা করে বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরাও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিডব্লিউবির চাল আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চাল না পাওয়া কয়েকজন সুবিধাভোগীর মাঝে চাল এবং অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ইউপি সদস্য এবং নিজের লোকজনের মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল এবং ১২শত টাকা করে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেন। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, চেয়ারম্যানের এই পদক্ষেপ অভিযোগের সত্যতাকে প্রমাণ করে। যদি প্রকৃতপক্ষে চাল আত্মসাতের ঘটনা না ঘটত, তবে হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। এতদিন ধরে কেন এই ত্রাণ সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানো হয়নি? সংবাদ প্রকাশের পরপরই চেয়ারম্যানের এই পদক্ষেপ দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে মনে করছেন তারা ।
চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বার্তা বাজারে প্রতিবেদন প্রকাশের পর চেয়ারম্যান আমাদের নির্দেশ দেন ক্ষতিগ্রস্তদের চাল বা টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ করতে। আমরা সেই নির্দেশ পালন করেছি।” আরেক ইউপি সদস্য জানান, “চেয়ারম্যান ভয় পেয়েছিলেন যে অভিযোগটি বড় সমস্যায় রূপ নিতে পারে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি আমাদের নির্দেশ দেন। যারা চাল পায়নি তাদের কাছে চাল এবং কিছুজনকে চালের পরিবর্তে ১২০০ টাকা করে দিয়েছি।”
ভিডব্লিউবি প্রকল্পের ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের এক সুবিধাভোগী বলেন, “প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই আমাদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে চাল এবং টাকা দিয়েছে। তবে তারা বারবার বলেছেন, বিষয়টি যেন কাউকে না বলি।” আরেকজন সুবিধাভোগী বলেন, “আমাদের চাল ও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে, কিন্তু তারা আবারও সতর্ক করেছেন যে বিষয়টি যেন আর প্রকাশ না পায়।”
গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কিছু সুবিধাভোগী নির্ধারিত সময়ে চাল নিতে না আসার কারণে এ সমস্যা হয়েছিল। চাল আত্মসাতের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। যারা চাল পায়নি, গতকাল তারা নিজেরাই পরিষদ থেকে চাল নিয়ে গেছেন।” তিনি আরও বলেন, “চাল বা টাকা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা হয়েছে এ কথাটি সঠিক নয়।” ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বার্তাবাজার/এস এইচ