গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ভিজিডি (বিডব্লিউবি) মাল আত্মসাত করেছে, সেটা তুই আগামীকাল শুটিবাড়ী এসে প্রমাণ করবি। আর প্রমাণ করতে না পারলে, সে বিচার তোর হবে। আর যদি সত্যতা প্রমাণ হয়, তোকে পুরস্কৃত করা হবে। কথাটা মনে রাখিস, তা না হলে তোর সাংবাদিকতা বের করে দেয়া হবে। মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) মধ্যরাতে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও ডিমলা উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের পিতা আব্দুর রহমান তার ব্যবহারিত (শেষ চার সংখ্যা ৩৬৩১) নাম্বার থেকে বার্তা বাজারের নীলফামারী প্রতিনিধি মো. রেজোয়ান ইসলামকে এসব হুমকিমূলক ভাষা ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে একটি অডিও ভয়েস পাঠান।

জানা গেছে, গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৩৮৫ জন ভিডব্লিউবি কার্ডধারী সুবিধাভোগী হিসেবে প্রতি মাসে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু ওই প্রকল্পের সুবিধাভোগী সারজিনা আক্তার, রেহেনা আক্তার, দুলালী বেগম, রুমি আক্তার, দিলপী বেগম এবং মারুফা আক্তার তাদের বরাদ্দকৃত মাস যথাক্রমে মে, জুন, জুলাই এবং সেপ্টেম্বর। তবে তারা এখনও ওই মাসগুলোর চাল পাননি।

আব্দুর রহমানের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে গম আত্মসাৎ সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত হন এবং ২০০৪ সালে রায় ঘোষণা হয়, যেখানে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে, ২০০৩ সালে তিনি ভুয়া সনদ দেখিয়ে সরকারি চাকরি লাভ করেন। এক যুগ পলাতক থাকার পর, ২০০৩ সালে চাকরি পাওয়ার পরেও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি চাকরি চালিয়ে যান। এমনকি, অন্য একজনকে টাকা বিনিময়ে তার বদলে জেল খাটানোর ব্যবস্থা করেন। এটি সেসময় সরকারের প্রতি এক বড় ধরনের প্রতারণা ও দুর্নীতির উদাহরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছিলো।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মো. রেজোয়ান ইসলাম বলেন, “সাংবাদিক হিসেবে জনগণের স্বার্থে সত্য উদঘাটন করা আমার পেশাগত দায়িত্ব। আমি আমার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে সর্বদা প্রস্তুত, এবং কোনো হুমকি বা ভয় আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা হতে পারে না। আমার কাজ হচ্ছে সত্য প্রকাশ করা, এবং আমি তা সর্বদা করব। যদি কখনও কোনো তথ্য ভুল হয়, আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরতে প্রস্তুত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সাংবাদিকতা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, এটি সমাজের জন্য একটি বড় দায়িত্ব, এবং আমি কখনোই আমার দায়িত্ব থেকে পিছু হটবো না। তবে, এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমাকে যেভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং পেশাগত স্বাধীনতার পরিপন্থী। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হুমকির পরও আমি নির্ভয়ে আমার কাজ চালিয়ে যাব এবং এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”

এ বিষয়ে হুমকিদাতা আব্দুর রহমানকে কল করা হলে, তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে প্রেসক্লাব ডিমলার সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ রুবেল বলেন, “এ ধরনের হুমকি সাংবাদিকতার স্বাধীনতার শত্রু। সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরতে কাজ করেন এবং এটি বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নেবে, যাতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।”

 

বার্তাবাজার/এস এইচ