মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক পেশাদার প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির বিমানবন্দর থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম সওকত হোসাইন সুমন ওরফে আশরাফুল চৌধুরী ইমরান (৩৯)। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিমানবন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, জনৈক ডা. এএসএম বদরুদ্দোজার সঙ্গে ব্যবসায়িক সর্ম্পকের সূত্র ধরে গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীদের পরিচয় হয়।ডা. বদরুদ্দোজাকে ইমরান জানান, সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরি করে এবং বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ নিয়ে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করতে পারবে। এ বিষয়ে ইমরান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বদরুদ্দোজার কয়েক দফা মিটিং হয়। গত বছরের ১৩ নভেম্বরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাদের সঙ্গে বদরুদ্দোজার আরও একটি মিটিং হয় এবং তারা ভিকটিম বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ নেওয়ার জন্য ৭ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান।

তাদের কথা বিশ্বাস করে বদরুদ্দোজা গত ১৮ নভেম্বর উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে ইমরান ও তার সহযোগীদের ৭ হাজার ডলার প্রদান করেন। দুইদিন পর গত ২০ নভেম্বর ইমরান ও তার সহযোগীরা বদরুদ্দোজাকে জানান, তিনি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ পেয়েছেন এবং এখন তাকে দুই লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ফলে তিনি লভ্যাংশ বাবদ সপ্তাহে পাঁচ হাজার ডলার পাবেন। ভিকটিম বদরুদ্দোজা বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি দেখে তার পূর্বে প্রদত্ত ৭ হাজার ডলার ফেরত চেয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রতারকরা তাকে নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করান। এরপর ভিকটিম গত ১৮ ডিসেম্বর উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে প্রতারক চক্রকে তাদের কথামতো দুই লাখ ডলার প্রদান করেন।

এরপর তারা ভিকটিমকে জানান, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ ও বিনিয়োগের যাবতীয় কাগজপত্র ও প্রদানকৃত ইউএস ডলার গ্রহণের রশিদ সিঙ্গাপুর হতে তাদের কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর করে ওইদিন (১৮ ডিসেম্বর) রাতেই পাঠাবেন। এরপর তারা ভিকটিমকে কাগজপত্রগুলো পাঠিয়ে দিবেন। রাতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভিকটিম তাদেরকে কয়েকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন বদরুদ্দোজা। কিন্তু তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন তিনি। তখন ভিকটিম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। তিনি তাদের খপ্পরে পড়ে দুই ধাপে ২ লাখ ৭ হাজার ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন। এ ঘটনায় ভিকটিম ডা. এএসএম বদরুদ্দোজার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বিমানবন্দর থানায় একটি প্রতারণার মামলা রুজু করা হয়।

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, মামলা রুজুর পর বিমানবন্দর থানা পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতারক চক্রটিকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের সদস্য ইমরানের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত সোমবার, ৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটায় বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে অভিযান চালিয়ে প্রতারক ইমরানকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানা যায়, আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীরা পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ দেওয়া ও বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত ইমরানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আরও একটি প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে। এদিকে বিমানবন্দর থানার মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ইমরানকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

বার্তাবাজার/এস এইচ