দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর হিলির গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা। গত বছর সড়ক ও জনপদ বিভাগ অভ্যন্তরিণ এই সড়কটি চারলেনে উন্নীত কাজ শুরু করলেও ঠিকাদারের গাফিলতি ও ধীরগতিতে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই খুঁড়ে রাখা সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দেরকে।

এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাহিলি কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দেয় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেহাল সড়ক দ্রুত সংস্কার না করা হলে আমদানি- রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানানো হয়।

এই ঘটনার পর শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হিলির দুর্ভোগপূর্ণ সড়ক পরিদর্শনে আসেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ। তবে কর্মকর্তাদের আশ্বাসে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আগামী সোমবার (১০জুলাই) সড়কে মানবন্ধন ও যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়াসহ আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন হিলি নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

জেলা প্রশাসকের পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ, হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায়, আমদানি- রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ এবং বাংলা হিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন চলন্ত স্থানীয় সচেতন মহল, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নেতারা।

এরআগে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকেলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে হিলি পানামা পোর্টে যাবার সময় কাাঁদাপানি ও খানাখন্দে ভরা সড়কটিতে উল্টে যায় ভারতীয় একটি ট্রাক। একইদিন বেলা ১১টায় এই সড়কে ফেঁসে যায় দেশীয় একটি ট্রাক। সব মিলিয়ে দিনব্যাপী সড়কটিতে যানজট সৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পড়ে স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা। ব্যহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয়দের দাবির প্রক্ষিতে সরকার হিলি চেকপোস্টের জিরো পয়েন্ট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত সোয়া ২ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করা সিন্ধান্ত নেয়। এরফলে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ঢালাইযুক্ত কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তবে শুরু থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গরিমসি করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ পরে কাঁচাপণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। কেননা দুর্ভোগপূর্ণ সড়কে কাঁচামাল বোঝাই ট্রাক আটকা পড়লে সেসব পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। পুঁজি হারাতে হবে তাদের।

এ ছাড়াও এই সড়কে ভোগান্তির কারণে তুলনামুলক পণ্য আমদানি কমে গিয়েছে। এতে এই বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ অনেকাংশ কমে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকারকদের। হিলি নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত সংশ্লিষ্টরা আশার বানী শুনিয়ে আমাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। তবে এবার কোন মধুর বানী আমরা শুনবো না। আগামী সোমবার হিলির এই রাস্তায় আমরা মানববন্ধন করবো, রোড ব্যরিকেড দিব। দল,মত নির্বিশেষে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দিনাজপুরের সড়ক ও বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ বলেন, জেলা প্রশাসক যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেভাবে কাজ শুরু করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর রাস্তার কাজ শেষ হবে। বর্তমান সময়ের ভোগান্তি কমাতে আমরা ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।

এদিকে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা সকলে সম্মিলিত ভাবে সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করবো। প্রশস্তকরণ কাজ দিনরাত ২৪ ঘন্টা চলমান থাকবে। আমি সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজনে সংশিষ্ট কর্মকর্তারা এখানে উপস্থিত থেকে কাজ করবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমি আশ্বাস্ত করছি ভোগান্তি কমাতে এই কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা হবে। এখানে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

বার্তাবাজার/রাহা