পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মন্তব্য করে বলেছেন, আমেরিকা, ভারতের মত দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক যায় না, আমাদের দেশে বিদেশী পর্যবেক্ষক না আসলে কি হবে? আমরা এটা কেয়ার করি না। শনিবার (৮ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমেরিকা, ভারতে মত দুনিয়ার বড় বড় দেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক যায় না। আমাদের দেশে না আসলে কি হবে? আমরা এটা কেয়ার করি না। এতে কি কিছু ক্ষতি হবে? তবে কেউ আসলে স্বাগত।’ আমরা দাওয়াত দিয়ে পর্যবেক্ষক নিয়ে আসি, আমাদের অনেক বাড়ন্তি কাজ হয় সেটা বন্ধ করা উচিৎ। আমরা কারো খাই না পরি না। কেউ হস্তক্ষেপ করবে সেটা সহ্য করা হবে না।

আমেরিকার ভিসানীতিতে সরকার চিন্তিত কিনা জানতে চাইলে মোমেন বলেন, এটা কনসিডার করা হবে, বিতর্ক, আলোচনা হতে পারে। যারা পোলিং, প্রিজাইডিং থাকে, মাঠ পর্যায়ে ভোট গ্রহণের কাজে নিয়োজিত তারা ভিসা নীতি নিয়ে চিন্তিত না। কিছু বড় কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী তাদের বাড়ি আছে ওখানে, ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে, তারা ভিসানীতিতে চিন্তিত। আমরা মোটেই এটা নিয়ে চিন্তিত না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা, ইউরোপে ২৫/৩০ শতাংশ ভোট দেয়। আমাদের দেশে ৭০ শতাংশ। নির্বাচনে ১০০ দলের মধ্যে দ ‘একটা অংশ নেয় না। সবার অংশগ্রহণ আমরা চাই। এজন্য স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করেছি, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করেছি। সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিদেশীরা আসেন, নিজের দেশ দেখেন। যারা আসছেন তাদের স্বাগত জানাই। তারা আমাদের নির্বাচন মডেল হবে, তারা দেখবেন। আমরা মিশর, আফগানিস্তানের মতো বড় দল বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চাই না। তবে সন্ত্রাসী দল না আসলে ক্ষতি হবে না।

আজ শনিবার ইইউ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল আসছে, আগামী ১১ তারিখ আসছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি এ প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা, ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আসবেন, তাদের স্বাগত জানাই। কেউ কেউ নির্বাচন বানচাল করতে চায়। সেটা দেশের জন্য খুব খারাপ হবে। কোন প্রেসার নাই। আমরা নিজের তাগিদে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমরা দেখতে চাই নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা। জনগণ ভোট না দিলে আমরা ক্ষমতায় আসবো না।

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা কি সব দলের সঙ্গে সংলাপ করে? প্রেসিডেন্ট কি পদত্যাগ করে নির্বাচন করেন? ওগুলো ইউজলেস আলোচনা। সবকিছু সংবিধান অনুযায়ী হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, ইইউ সংলাপের কথা কি অফিশিয়ালি বা আনঅফিশিয়ালি বলেছে?
গণতন্ত্র, মানবাধিকার আপহোল্ড করতে চাই। এসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে কোন সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে আলোচনা নয়। সংলাপে আগেও কোন অগ্রগতি হয়নি। ভারত, আমেরিকাতেও সন্ত্রাসী দল নির্বাচনে অংশ নেয় না। কিছু লোক নির্বাচন করতে দিতে চান না, তারা বলে বেড়াচ্ছেন এটা। তারা বাহানা খুঁজছেন। আমরা এটা চাই না।

বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় যা বেখাপ্পা দেখায়। বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের এ সব কাজ নয়।

চীন থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, আমরা খামোখা লোন (ঋণ) নেইনি। অধিকাংশ লোন (ঋণ) আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। চীন থেকে নিয়েছি ৩.৫ মিলিয়ন ডলার, ১ শতাংশের লোন। কোনভাবেই চায়না লোন ট্র্যাপে পড়ি নাই। কেউ কেউ ভাবছেন আমরা চায়না দিকে ধাবিত হয়েছি। কিন্তু এটা ঠিক না। আমরা চীনের বা অন্য কারো লেজুড়বৃত্তি করি না। আমরা সবার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলি।

আমরা কৌশলগতভাবে ভালে জায়গায় আছি। অনেকেই চীনকে কনটেইন করতে চায়। কিন্তু আমরা চাই ওপেন, ফ্রি ইন্দোপ্যাসিফিক।
ভূ-রাজনৈতিক কারণে আমাদের প্রতি অনেকের নজর। কিন্তু আমরা চাই সবার।

গুম খুন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উন্নতি করার কারণে আমরা অনেকের চক্ষুশুল। অনেকেই গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ নানা অজুহাত তুলে ধরে। আমাদের দেশে নাকি ৬০০ মিসিং হয়েছে। কিন্তু বন্ধু দেশে বছরে ৬ লাখ মিসিং হয়। এসব অজুহাত তুলে আমাদের ওপর খড়গ হন। আমাদের এবছর একজনও বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে? কিন্তু বন্ধু দেশে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়। নিজের চেহারা আয়নায় দেখেন। যখন উন্নতি হয় তখন মিথ্যা, গুজব ছড়ায়। এগুলো চলতে থাকবে।

বার্তা বাজার/জে আই