শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার এক সন্তানের জননী রাবেয়া (ছদ্মনাম)। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিলো তার। একসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় পার্শ্ববর্তী নড়িয়া উপজেলার আসাদুল মাল (২৯) নামে এক যুবকের সাথে। এরপর শুরু হয় টুকটাক কথা বার্তা একপর্যায়ে কৌশলে রাবেয়ার ফোন নম্বর নেন আসাদুল নামে ওই যুবক।
দুবাই থেকে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। এরপর আসাদুলের কথামতে বিয়ের আশ্বাসে স্বামীকে ডিভোর্স দেন রাবেয়া। একপর্যায়ে আসাদুল ছুটিতে বাংলাদেশে এসে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সহজ-সরল রাবেয়াকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে কৌশলে নিজ উপজেলার নড়িয়ায় নিয়ে আসেন। ওইদিন তাৎক্ষণিকভাবে কালেমা পড়ে মৌখিক বিয়ে করেন আসাদুল । এরপর একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন তিনি। গোপনে একান্ত মুহূর্তের ভিডিও করেন আসাদুল। রাবেয়া আনুষ্ঠানিক বিয়ে করে ঘরে তুলতে চাপ দিলে বেরিয়ে আসে আসাদুলের আসল রূপ। গোপনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিতে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুবার রাবেয়াকে হোটেলে যেতে বাধ্য করেন আসাদুল। এরপর খোঁজ খবর নিয়ে রাবেয়া জানতে পারে আসাদুল বিবাহিত ঘরে রয়েছে স্ত্রীও। এরপর দুজনের মধ্যে শুরু হয় কথা-কাটাকাটি একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নেন ভুক্তভোগী রাবেয়া।
রাবেয়া শরীয়তপুরের নড়ীয়া থানায় আসাদুল সহ তার পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন, নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের মেম্বার ঘাট এলাকার বাচ্চু মালের ছেলে আসাদুল অত্যন্ত খারাপ চরিত্রের মানুষ। তিনি নারীলোভী, চরিত্রহীন ও লম্পট। তিনি বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে নারীকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করেন। নারীদের সর্বনাশ করা তার পেশা ও নেশা। রাবেয়া উল্লেখ করেন, ব্ল্যাকমেল করে তাকে ধর্ষণের পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেন আসাদুল। তিনি কয়েক দফায় নগদ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এলাকায় অভিযুক্ত আসাদুলের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়দের অনেকে তাকে ‘নারী শিকারি আসাদুল নামে চিনে। তার কারণে একাধিক নারীর সংসার ভেঙেছে। এমনকি একাধিক নাড়ীর সাথে ঘনিষ্ঠতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান স্থানীয়রা। এলাকাবাসী জানান আসাদুল প্রবাসী হলেও ওর টার্গেট বিবাহিত, ডিভোর্সি ও সহজসরল নাড়ী। প্রথমে বন্ধু হিসেবে কথা বললেও একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেন আসাদুল। এছাড়াও একাধিক নাড়ীর সাথে আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আমরা প্রতারক আসাদুলের বিচার চাই।
তার যৌন লালসার শিকার এক নারী সর্বস্বান্ত হয়ে বলেন, আমার সাথে আসাদুলের টিকটিকে পরিচয় এরপর প্রেমের সম্পর্ক করে আমাকে বিয়ে করনে বলে লম্পট আসাদুল রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। আমার টাকা-পয়সা সব হাতিয়ে নিয়েছে। অব্যাহত হুমকির মুখে সব অন্যায় হজম করতে বাধ্য হয়ছি।’ আমি এখন স্বামী সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী একাধিক নারী জানান, আসাদুল দুবাইতে গাড়ীর ব্যবসা করেন এই পরিচয়ে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে ছুটিতে বাংলাদেশে এসে কৌশলে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এসময় কৌশলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে এসব ভিডিও ব্ল্যাকমেল করে নারীদের নিয়মিত একান্ত সময় কাটাতে বাধ্য করেন আসাদুল।
আসাদুলের ফাঁদে সর্বস্ব হারানো ডামুড্যা উপজেলার রাবেয়া আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আসাদুল বিয়ের প্রলোভনে আমার সর্বনাশ করেছে। তার কারণে আমি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছি। আসাদুল আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে একাধিক বার ধর্ষণ করেছে। বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। কেউ আমার কথা শোনেনি। উল্টো আমাকে খারাপ মেয়ের তকমা দিয়েছে। শেষমেশ তার বাড়ীতে গেলে আসাদুলের বাবা-মা এবং ভাই সহ কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করে আমার মোবাইল টাকাপয়সা ও স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি নড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি এবং ন্যায় বিচারক আসা করছি। অব্যাহত হুমকির মুখে সব অন্যায় হজম করতে বাধ্য হয়ছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আসাদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো এবং যেটা হয়েছে তার ইচ্ছাতেই হয়েছে। একাধিক নাড়ীর বিষয় জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন এসব অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্র, ‘আমাকে সামাজিকভাবে ছোট করার জন্য একাধিক নারীঘটিত অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে নড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বার্তাবাজার/এস এইচ